কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
ঘরে-বাইরে প্রবল বিতর্কের মুখে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগের প্রশ্নে আরও পিছু হঠল কেরলের বাম সরকার। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় কেন্দ্রের সংশোধিত ওই আইন যে সত্যিই ‘কালা কানুন’, তা মেনে নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সিপিএমের পলিটব্যুরোর হস্তক্ষেপে আগেই তাঁর নির্দেশ ছিল, জেলা পুলিশ কারও বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র ধারা দিতে পারবে না। সম্মতি নিতে হবে আইজি পদমর্যাদার কোনও অফিসারের কাছ থেকে। কেরলের সিপিএম তথা এলডিএফ এবং বিরোধীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ বার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউএপিএ প্রয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পুলিশের হাতে থাকবে না। সিদ্ধান্ত নেবে সরকার এবং ইউএপিএ কমিটি।
তিরুঅনন্তপুরমে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী রীতিমতো বিবৃতি জারি করে বাম সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, ইউএপিএ-র ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা প্রয়োজন। কেরল বিধানসভায় বাম শরিক সিপিআইয়ের সুরে বিরোধী ইউডিএফ সোমবার সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সিপিএমের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্ট এলডিএফ-ও ‘কালা কানুন’ প্রয়োগ থেকে সরে আসার আনুষ্ঠানিক দাবি তুলেছে। এ সবের প্রেক্ষিতেই সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে।
কেরলের কোঝিকোড়ে সিপিএম সমর্থক দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে মাওবাদীদের পক্ষে প্রচারের কিছু সামগ্রী উদ্ধারের পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র আওতায় অভিযোগ এনেছে পুলিশ। তার কয়েক দিন আগে পালাক্কাড জেলার আট্টাপাড্ডিতে কেরল পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘থান্ডারবোল্ট’-এর সঙ্গে সংঘর্ষে চার মাওবাদীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। তার সঙ্গেই দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে অভিযোগ আনায় বিতর্ক ঘনীভূত হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী প্রশ্ন তুলেছে, কেন্দ্রীয় সরকার ইউএপিএ সংশোধন করার সময়ে দল যার বিরোধিতা করেছিল, কেরলে বাম সরকার সেই আইনকেই সামান্য কারণে ব্যবহার করবে কেন? দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে ইউএপিএ না দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। সিপিআই নেতাদের যুক্তি উদ্ধৃত করে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা প্রশ্ন তুলেছেন, কারও কাছে মাওবাদী বই বা প্রচারপত্র পাওয়া গেলেই ইউএপিএ দিতে হবে নাকি? তা হলে বিজেপির সঙ্গে বাকিদের ফারাক কোথায়?
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে নির্দেশিকা অযোধ্যায়
সম্মিলিত চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বলেছেন, ‘‘ইউএপিএ যে কালা কানুন, তাতে কোনও সংশয় নেই। আমাদের অবস্থানেও কোনও দ্বিধা নেই। পুলিশ তাদের কাজের পক্ষে কিছু যুক্তি দিচ্ছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র দফতর এবং ইউএপিএ কমিটি সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই ওই ধারা প্রযোজ্য হবে, এমন সংস্থান আইনে আছে। সেই সংস্থান কাজে লাগানো হবে। কিন্তু সিপিএমের একাংশ, সিপিআই ও কংগ্রেসের প্রশ্ন, পুলিশ তো দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে ইউএপিএ দিয়ে দিয়েছে! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের ব্যাখ্যা, এর আগে কয়েকটি ঘটনায় পুলিশকে ইউএপিএ ধারা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বার আদালতেই সরকার তার বক্তব্য স্পষ্ট করে দেবে বলে তাঁরা আশাবাদী।