নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (বাঁ দিকে), মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে। এমনই মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারাতে গেলে দেশের আঞ্চলিক দলগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বস্তুত, ২০২৪-এর লোকসভা ভোট বিজেপির ‘জেতা ম্যাচ’ বলে মনে করেন না অমর্ত্য। বরং তিনি তাকিয়ে রয়েছেন দেশের একাধিক আঞ্চলিক দলের ফলাফলের দিকে। তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলগুলির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলেই মনে করেন তিনি।
নবতিপর অর্থনীতিবিদ ‘ঘোষিত’ বিজেপি বিরোধী। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর একাধিক বার উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন তিনি। বিজেপির লাগাতার আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীকে। এই বাংলা থেকেও রাজ্য বিজেপির সভাপতি থাকাকালীন তাঁকে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি যে বিজেপিকে হারানোর কথা বলবেন, তা প্রত্যাশিতই। কিন্তু যেটি গুরুত্বপূর্ণ—বিজেপিকে হারাতে আঞ্চলিক দলগুলির গুরুত্বের কথা বললেন তিনি। অর্থাৎ, কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলের কথা তিনি বিজেপির ‘বিকল্প’ হিসেবে বা বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচনা করছেন না। প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে অমর্ত্যকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করেছিল অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার।
প্রশ্নের জবাবে অমর্ত্য জানিয়েছেন, তৃণমূল নেত্রী মমতার ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে। কিন্তু দেখতে হবে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কী করে বিজেপির বিরুদ্ধে জন অসন্তোষকে কাজে লাগাতে পারেন। অমর্ত্য বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে, একাধিক আঞ্চলিক দল আগামী দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। আমার মনে হয়, ডিএমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দল। তৃণমূলও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজবাদী পার্টির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু আমি জানি না, এই মুহূর্তে তারা কী অবস্থায় রয়েছে।’’
তিনি কি মনে করেন মমতা দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন? এই প্রশ্নের জবাবে অমর্ত্য বলেন, ‘‘এমন নয় যে তাঁর এটা করার ক্ষমতা নেই। এটা খুব স্পষ্ট, তাঁর সেই ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু অন্য দিকে, এটা এখনও প্রতিষ্ঠিত নয় যে, মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে জনগণের হতাশার জায়গাগুলোকে এক ছাতার তলায় এনে ভারতে বিভেদের রাজনীতির অবসান ঘটাতে নেতৃত্ব দেবেন।’’
পাশাপাশি কংগ্রেস নিয়েও নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন নবতিপর অমর্ত্য। আগামী লোকসভা ভোট কংগ্রেস জিততে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমি জানি না, কেউ কংগ্রেসের উপর ঠিক কতটা নির্ভর করতে পারবেন। আবার অন্য দিকে, কংগ্রেসই একমাত্র দল যাদের অখিল ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু আবারও বলছি, সমস্যা কংগ্রেসের মধ্যেই।’’
(এই প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল, ২০১৪ সালে অমর্ত্য সেনকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই তথ্য ঠিক নয়। সঠিক তথ্য হল, ১৯৯৯ সালে অমর্ত্য সেনকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করেছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)