‘টাটকা খবর’: ১৯৬৬-তে মঁ ব্লাঁ-র কাছে ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া কিছু সংবাদপত্র। এএফপি
চমকে যাওয়ার মতোই শিরোনাম। ‘দ্য হিন্দু’-র প্রথম পাতা। মোরারজি দেশাইকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দলের নেত্রী নির্বাচিত ইন্দিরা গাঁধী। দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই বলা হল সরকার গড়তে— লিখেছিল ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’। আল্পসের বরফ গলতেই ‘ব্রেকিং নিউজ’! বেরিয়ে এল দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অথচ দিব্যি পাঠযোগ্য এমনই অন্তত হাফ ডজন সর্বভারতীয় দৈনিক। শুধু প্রথম পাতা নয়, আস্ত প্রায় সব পাতা। সব কাগজই ১৯৬৬ সালের ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারির। সেই ২৪, যে-দিন আল্পসের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ফ্রান্সের মঁ ব্লাঁ-র কাছে আছড়ে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। সেই বিমান, যাতে মুম্বই (তখন বম্বে) থেকে লন্ডন হয়ে ভিয়েনার বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাত্রী হিসেবে ছিলেন ভারতীয় পরমাণু গবেষণার জনক হোমি জাহাঙ্গির ভাবা। ভয়াবহ ওই বিমান দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ গিয়েছিল আরও ১৭৬ জনের।
মঁ ব্লাঁ-র কাছে প্রায় ওই একই জায়গায় ১৯৫০-এর ৩ নভেম্বর ৪৮ জন যাত্রীকে নিয়ে ভেঙে পড়েছিল আরও একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। দু’-এক জন যাত্রীর অংশবিশেষ ছাড়া দু’টি দুর্ঘটনা থেকেই তেমন দেহাবশেষ মেলেনি। ২০১৩-য় বহুমূল্য রত্নে ভরা একটি বাক্স মিলেছিল । তবে তা কোন বিমানের, জানা যায়নি। অবশ্য সম্প্রতি পাওয়া খবরের কাগজগুলিতে ইন্দিরা গাঁধীকে নিয়ে শিরোনাম প্রমাণ দিচ্ছে, এ সব ছিল ১৯৬৬-র দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই কাঞ্চনজঙ্ঘা বিমানেই। বলা হয়, এয়ার ট্রাফিকের সিগন্যাল বোঝার ভুলেই দুর্ঘটনা। আবার দেশ-বিদেশের একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়, ভাবাকে খুন করতেই ঘটানো হয়েছিল ওই দুর্ঘটনা। একাধিক বার অভিযোগের আঙুল উঠেছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র দিকে। দুর্ঘটনার তিন মাস আগে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে ভাবা জানিয়েছিলেন, সরকারি সবুজ সঙ্কেত পেলে আর বছর দেড়েকের মধ্যেই পরমাণু বোমা বানিয়ে ফেলবে ভারত। ওই বিমানেরই ধ্বংসাবশেষ থেকে হালে উদ্ধার খবরের কাগজের শিরোনাম বলছে, নতুন সরকার গড়তে চলেছেন ইন্দিরা।
কিন্তু অত দিন পরে ‘বরফের সমুদ্র’ থেকে কী ভাবে ভেসে এল খবরের কাগজ? একাধিক সংবাদ সংস্থার দাবি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট উচ্চতায় চ্যামোনিক্স স্কিয়িং হাবের কাছাকাছি একটি ক্যাফে-রেস্তরাঁর মালিক তিমোথি মতিন গত সপ্তাহেই এ সব উদ্ধার করেন। অভিযান চালিয়ে নয়, আল্পসের বরফ গলায় এমনিই কাগজগুলি তাঁর নজরে আসে বলে দাবি মতিনের। যে হিমবাহতে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ আছড়ে পড়েছিল, সেখান থেকে মতিনের ক্যাফে ৪৫ মিনিটের হাঁটাপথ। ক্যাফে-মালিকের কথায়, ‘‘প্রায় ছ’দশক পরে হাতে পাওয়া কাগজগুলো ভাল করে শুকনো করা হচ্ছে। কিছু দিন সবার দেখার জন্য আমার ক্যাফেতেই রাখব। পরে হয়তো কোনও জাদুঘরে দিয়ে দেব।’’
আরও পড়ুন: বাঙালি গবেষকের মৃত্যু, তদন্ত দাবি
অনেকেই বলছেন, মতিন এ সব উজ্জ্বল-উদ্ধার লুকিয়ে রাখতে পারতেন। পরে সুযোগ মতো কালোবাজারে ছাড়তে পারতেন। কিন্তু মতিন জানান, এই ‘আবিষ্কার’ বন্ধু ও আরও পাঁচ জন অচেনা অতিথিদের দেখিয়েই তাঁর সুখ।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ছেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রক উদ্বিগ্ন