রাজনাথ সিংহ এবং অমিত মিত্র। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন রাজীব গাঁধী একবার রাজ্যের সরকারগুলির প্রতি কটাক্ষ করে বলেছিলেন— দিল্লি থেকে ১০০ পয়সা পাঠালে রাজ্যের মানুষের হাতে পৌঁছয় ১৫ পয়সা। এ দিন প্রায় একই অভিযোগ শোনা গেল প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংহের মুখে। বালুরঘাটের এক জনসভায় যোগ দিতে এসে তিনি আরও দাবি করেন, অর্থ কমিশনের বরাদ্দ বৃদ্ধি থেকে রাস্তার জন্য বরাদ্দ, সব ক্ষেত্রেই নিয়মিত অর্থ জুগিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু ‘মমতাদিদি মোদীজিকে নন্দ ঘোষ বানিয়েছেন’। তাঁর এই দাবিকে খণ্ডন করে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র পাল্টা দাবি করেন, এই তথ্যের বেশিরভাগই ভুল। তিনি জানান, রাজনাথ যা দাবি করেছেন, প্রকৃতপক্ষে তার থেকে অনেক কম টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। আর সেই অর্থ দেওয়াটা তাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা। তা ছাড়া দিল্লি যে টাকা দেয়, তার অডিট হয়। তাই এখানে ১৪ পয়সার কথা বলে লাভ নেই।
রাজনাথ এ দিন বলেন, ‘‘কংগ্রেস আমলে ১৩ অর্থ কমিশন থেকে এই বাংলাকে পাঁচ বছরে ১ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হত। সেখানে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাঁচ বছরে এই বাংলাকে ১৪ অর্থ কমিশন থেকে ৪ লক্ষ ৪৮ হাটার কোটি টাকা দিয়েছে।’’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘দিল্লি থেকে ১০০ পয়সা এলে এখন মানুষের কাছে ১৪ পয়সা যায়। আমরা এলে সরাসরি ১০০ পয়সাই দেব।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘৭৬৪ কিমি জাতীয় সড়কের জন্য ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। আরও ৮৫০০ কিমি সড়কের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ বার সড়ক হবেই। কারণ আমরা ক্ষমতায় আসব।’’
রাজনাথের এই অভিযোগগুলি খণ্ডন করে অমিত মিত্র বলেন, ‘‘২০১৪-১৫ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত ছ’বছরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ বাবদ দিল্লি দিয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে নিজেদের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নিজেদের পুঁজি থেকে রাজ্য সরকার ৩ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। এর পাশাপাশি বেতন, পেনশন, সরকারি প্রকল্পে আরও ৪ লাখ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য।’’
রাজনাথের দাবি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘‘উনি যা বলেছেন, বাস্তবে তার অর্ধেকেরও কম টাকা দিল্লি দিয়েছে আমাদের। আর কেন্দ্র যা দেয়, তা দয়া নয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলিকে দিল্লি সেটা দিতে বাধ্য।’’ ১৪ পয়সার প্রসঙ্গ নিয়েও অমিতবাবু জানান, কেন্দ্র থেকে যে টাকা আসে, তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এর অডিট হয়। এবং তা বিধানসভায় পেশ করতে হয়। তিনি স্পষ্ট করে দেন, তাই এই নিয়ে এমন মন্তব্যের কোনও যৌক্তিকতা নেই। জাতীয় সড়ক প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, ‘‘গত দশ বছরে ৮৯ কিমি গ্রামীণ সড়ক, সাড়ে পাঁচ হাজার কিমি রাজ্য সড়ক হয়েছে। আর জাতীয় সড়কের কী অবস্থা, সেটা তো ওঁদের নিজেদেরই বোঝা উচিত।’’