ছবি সংগৃহীত।
শিক্ষার অভাবের সঙ্গে অপরাধের যোগ নিয়ে নানা মত রয়েছে। তাতে আরও জলবাতাস দিতে পারে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর (এনসিআরবি) রিপোর্ট। কারণ, রিপোর্ট বলছে দেশে মোট বন্দির ২৭.৭ শতাংশের সঙ্গে এখনও অক্ষরের সম্পর্ক ঘটেনি।
১৩৫০টি জেলে ৪,০৩,৭৩৯ জন বিচারাধীন আর দণ্ডিত বন্দির থাকার জায়গা রয়েছে। কিন্তু ধারণক্ষমতার থেকে বেশি বন্দি রয়েছে জেলগুলিতে। এখন দেশে মোট বন্দি ৪,৭৮,৬০০। তার মধ্যে ১,৩২,৭২৯ জনের সঙ্গে অক্ষরের পরিচয়ই হয়নি। এনসিআরবির রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ১,৯৮,৮৭২ জন দশম শ্রেণির মানদণ্ড পেরোতে পারেননি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মধ্যে বড় একটি অংশ পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণি উত্তীর্ণ। ১,০৩,০৩৬ জন দশম শ্রেণির উত্তীর্ণ হলেও স্নাতকের আগেই শেষ হয়েছে পড়াশোনা। আর স্নাতক বন্দি রয়েছেন ৩০,২০১। পাশাপাশি, দেশের জেলে ৮,০৮৫ জন স্নাতকোত্তর বন্দি রয়েছেন। টেকনিক্যাল বিষয়ে স্নাতক বা ডিপ্লোমা থাকা বন্দি ৫,৬৭৭ জন।
এই পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে শিক্ষার অভাবকে অপরাধ প্রবণতা তৈরির অন্যতম কারণ বলে ব্যাখ্যা করছেন অনেকে। যা মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞদের আর একটি অংশ। তাঁদের মতে, অপরাধের সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্কের থেকে কখনও কখনও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে শিক্ষিত মানুষের ‘প্রভাব’। যার জেরে তাঁরা অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে আইনি লড়াই লড়তে পারেন। আর অক্ষরজ্ঞানহীনতা বা স্বল্প শিক্ষার কারণে তা সম্ভব হয় না অনেকের। এমনকি, সে সব ‘প্রভাব’ না থাকার কারণে কখনও ‘অপরাধ’ না করেও জেল খাটতে হচ্ছে অনেককেই।
অবশ্য জেলেই শিক্ষার একের পর এক ধাপও পেরোচ্ছেন অনেকে। স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট (সেট) পাশ করেন অর্ণব দাম। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সহ-বন্দিদের সাহায্যেও লেখাপড়া করছেন অনেক বন্দিই। আর তাতে সমর্থন যোগাচ্ছে এনসিআরবির তথ্যও। কারণ, ২০১৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা জগতে অনুপ্রবেশ করেছেন দেশের ৪৭,৮৬০ বন্দি। তেমন ভাবেই বয়স্ক শিক্ষায় ৪৪,৪৩৮ বন্দি শিক্ষিত হয়েছেন। আর উচ্চ শিক্ষার দিকে এগিয়েছেন ১১,৯১৭। প্রযুক্তির নাগালের সঙ্গে জীবন চর্চাকে জুড়তে কম্পিউটার কোর্স করছেন ১০,০৪৭ জন বন্দি। তার সঙ্গে জেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৫৪,৭২৬ জন বন্দি। যা জেলের অন্দরে ও বাইরে অনেকের কর্মসংস্থানে সহায়ক হয়।