গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংহ
জেনারেল বিপিন রাওয়তের দুর্ঘটনাগ্রস্ত হেলিকপ্টারের বাকি দশ সহযাত্রীর দেহও শনাক্ত হল। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের শেষকৃত্য এ দিনই সম্পন্ন হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মৃতদের নমুনা হায়দরাবাদে পাঠানো হয়েছিল। দার্জিলিঙের হাবিলদার সতপাল রাইয়ের দেহও শনাক্ত হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থার খবর। সতপালের ছেলে বিক্কেল রাই দেহ নিয়ে বাগডোগরা হয়ে দার্জিলিঙের তাকদায় যাবেন।
দুর্ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র জেনারেল রাওয়ত, তাঁর স্ত্রী মধুলিকা এবং ব্রিগেডিয়ার লখবিন্দর সিংহ লিড্ডারের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছিল। গত কাল দিল্লিতে তিন জনেরই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এ দিন হরিদ্বারে গিয়ে রাওয়ত দম্পতির অস্থিভস্ম গঙ্গায় বিসর্জন দেন তাঁদের দুই কন্যা কৃতিকা এবং তারিণী। দুর্ঘটনাগ্রস্ত চপারের দুই পাইলট এবং অন্য কর্মী-অফিসারদের শনাক্ত না হওয়া দেহগুলি দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের আর্মি বেস হাসপাতালের মর্গে রাখা ছিল। আজ প্রথমে চপারের দুই চালক উইং কমান্ডার পৃথ্বী সিংহ চৌহান এবং স্কোয়াড্রন লিডার কুলদীপ সিংহ, বায়ুসেনার জুনিয়র ওয়ার্যান্ট অফিসার এ প্রদীপ, জুনিয়র ওয়ার্যান্ট অফিসার রানা প্রতাপ দাস, সেনার ল্যান্স নায়েক বি সাই তেজা এবং ল্যান্স নায়েক বিবেক কুমারের দেহ শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় সেনা। দেহগুলি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ল্যান্স নায়েক তেজা বাদে বাকিদের শেষকৃত্য এ দিনই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। রাতে জানানো হয়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হরজিন্দর সিংহ, হাবিলদার সতপাল রাই, নায়েক গুরসেবক সিংহ এবং নায়েক জিতেন্দ্র কুমারের দেহও শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের দেহ আগামিকাল পরিবারকে দেওয়া হবে। আজ আগরার শ্মশানে উইং কমান্ডার চৌহানের চিতায় অগ্নিসংযোগ করে তাঁর বারো বছরের মেয়ে আরাধ্যা জানায়, বাবার মতোই সে বায়ুসেনার পাইলট হতে চায়।
ছেলের পথ চেয়ে আর এক বাবা— প্রাক্তন কর্নেল কে পি সিংহ। দুর্ঘটনার দিন জেনারেল রাওয়তের চপারে লিয়াজ়ঁ অফিসার হিসেবে ছিলেন তাঁর ছেলে, বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংহ। আগুনে মারাত্মক ভাবে পুড়ে গিয়েও বেঁচে যান শৌর্য চক্র জয়ী এই পাইলট। ওয়েলিংটনের সামরিক হাসপাতালে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসাধীন থাকার পরে বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
‘‘ও জিতেই ফিরে আসবে। ও এক জন যোদ্ধা।’’— ভোপাল থেকে ফোনে বলছিলেন বরুণের বাবা। প্রাক্তন কর্নেল অবশ্য এ-ও জানালেন যে, বরুণ কেমন আছেন, সেটা এক কথায় বোঝানো সম্ভব নয়। বললেন, ‘‘প্রতি ঘণ্টায় বরুণের অবস্থার উপরে নজর রাখা হচ্ছে। নজরদারিতে ওঠা-নামা থাকেই, কিছু বলা যায় না। ও সেরা চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছে। সেরা বিশেষজ্ঞেরা ওকে দেখছেন। সারা দেশ প্রার্থনা করছে। ওকে চেনেন না কিংবা অবসর নিয়েছেন, এমন মানুষেরা দেখা করতে আসছেন। মহিলারাও আসছেন ওকে দেখবেন বলে। এত মানুষের ভালবাসা পাচ্ছে বরুণ। আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি।’’