নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর থেকে তেলুগু দেশম সমর্থন তোলার পরে তাদের এনডিএ জোট ছাড়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কথা ছিল, এই সিদ্ধান্ত জানানো হবে শুক্রবার রাতে। কিন্তু সকাল ন’টার আগেই বিচ্ছেদের কথা জানিয়ে দিলেন টিডিপি নেতা তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। এবং বিচ্ছেদের জন্য দায়ী করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীকে। চিঠি দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে। লোকসভা ভোটের আগে এই ‘চন্দ্র-গ্রহণ’ নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা হয়ে গেল পদ্ম-শিবিরের কাছে।
ত্রিপুরা জয়ের পরেই মোদী-অমিত শাহরা দাবি করেছিলেন, তাঁরা ২১ রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছেন। সেই গর্ব আজ কিছুটা খর্ব তো হলই। বিজেপির সঙ্গ ছাড়ল সাংসদ সংখ্যার বিচারে এনডিএ-র সবচেয়ে বড় শরিক। এবং সেই সঙ্গেই গোটা দক্ষিণ ভারত হয়ে গেল ‘বিজেপি-মুক্ত’! জোট ছাড়ার ঘোষণার পরে চন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘অন্ধ্রের প্রতি অবিচারের জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রীই।’’ অনেকেই বলছেন, মোদীকে কাঠগড়ায় তুলে চন্দ্রবাবু আসলে সুকৌশলে অন্ধ্রে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া মোকাবিলার চেষ্টা শুরু করলেন। সে কারণেই চার বছর ধরে বিজেপির সঙ্গে ঘর করার পরে অন্ধ্রের বিশেষ মর্যাদার দাবি নিয়ে এত সরব তিনি।
ক্ষত ঢাকতে বিজেপি বলছে, চন্দ্রবাবু জোট ছাড়ায় অন্ধ্রে দলের শক্তি বাড়ানোর সুযোগ এল। সংগঠন নিয়ে কথা বলতে কালই দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অমিত শাহ। দলের একাংশের বক্তব্য, এখন দূরত্ব বাড়লেও লোকসভার পরে প্রয়োজনে ফের তেলুগু দেশমের হাত ধরা যাবে।
মুখে যা-ই বলুক, গত কয়েক মাসে যে ভাবে একের পর এক শরিক ফোঁস করছে, লোকসভা ভোটের আগে সেটি মোটেই সুখকর নয় মোদী-শাহের কাছে। কারণ, প্রথমত এর প্রভাব পড়ছে দলের ভাবমূর্তিতে। দ্বিতীয়ত, বিরোধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে। আজ কংগ্রেস থেকে তৃণমূল— সকলেই চন্দ্রবাবুকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদীর রক্তচাপ বাড়িয়েছেন। জোট ছাড়ার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীন পট্টনায়কের সমর্থন পেয়েছেন চন্দ্রবাবু। এ দিন মমতা বলেন, ‘‘সব ভেবেই নিজস্ব জায়গা থেকে টিডিপি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভালই হয়েছে।’’
লোকসভার লড়াই
দল ২০১৪ ২০১৮
• বিজেপি ২৮২ ২৭৩*
• এনডিএ ৩৩৬ ৩১৫
• কংগ্রেস ৪৪ ৪৮
• ইউপিএ ৫৮ ৫২
নির্বাচিত আসন
৫৪৩
মনোনীত আসন
২
এখন খালি আসন
৫
সংখ্যাগরিষ্ঠতা
২৭১
*স্পিকার-সহ। এ ছাড়া বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন দু’জন মনোনীত সদস্য। যাঁরা অনাস্থার সময় ভোট দিতে পারবেন। তবে সাংসদ কীর্তি আজাদকে সাসপেন্ড করেছে দল। আর এক সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হাও বিদ্রোহী। যদিও তাঁরা হুইপের অধীন। বিপক্ষে ভোট দিলে সাংসদ পদ খোয়াবেন।
শিবসেনা অনেক দিনই বিজেপির ‘দাদাগিরি’তে ক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যেই জোট ছাড়ার নোটিসও ধরিয়েছে তারা। সম্প্রতি শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’য় বলা হয়েছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি একশোরও বেশি আসন হারাবে। জিতন রাম মাঁঝি তো ছেড়েই দিয়েছেন। পা বাড়িয়ে আছেন উপেন্দ্র কুশওয়াহা। আর জোট বদলের ‘আবহাওয়া-বিজ্ঞানী’ বলে দিল্লির অলিন্দে পরিচিত রামবিলাস পাসোয়ানও বেসুরে গাইছেন! রামবিলাস-পুত্র চিরাগ আজ বলেন, ‘‘এখনও এনডিএতে আছি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে বিজেপির হার উদ্বেগজনক।’’ দিল্লিতে বলা হয়, ক্ষমতায় কে আসছেন, আগাম আঁচ করে রামবিলাস দল পাল্টান। ফলে রামবিলাসের অবস্থান রক্তচাপ বাড়িয়েছে মোদীর।
গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখাচ্ছে বিহারে নীতীশ কুমারের জেডিইউ, জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি এবং পঞ্জাবে অকালি দল। এর মধ্যে পিডিপি-র সঙ্গে জোট করে উপত্যকায় সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু দু’দলের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। অকালি এমনিতে অনুগত। কিন্তু সম্প্রতি তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, নানা বিষয়ে বিজেপির ‘দাদাগিরি’ না-পসন্দ। একই সঙ্গে দলের বক্তব্য, ২০১৯-এর ভোটে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে লালুর কাছে ধাক্কা খেয়ে জেডিইউ এখন বিহারের জন্য বিশেষ মর্যাদার দাবি তুলতে শুরু করেছে।
শরিকদের অনেকেই হাত ছেড়েছে। অনেকে হাত গুটিয়ে। বাকিরাও নানা কারণে হয় ক্ষুব্ধ, নয় ভরসা হারাচ্ছে। সব মিলিয়েই উদ্বেগের ছায়া গেরুয়া-শিবিরে।