এডিএমকে প্রধান পলানীস্বামী এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী। — ফাইল চিত্র।
সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছিল গত কয়েক মাস ধরেই। শেষ পর্যন্ত সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ছাড়ার কথা ঘোষণা করল তামিলনাড়ুর প্রধান বিরোধী দল এডিএমকে। সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এডিএমকে প্রধান ইকে পলানীস্বামীর নেতৃত্বে দলের বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পলানীস্বামী ঘনিষ্ঠ নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কেপি মুনুস্বামী চেন্নাইয়ে সাংবাদিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বলেন, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে পৃথক জোট গড়ে আমরা এবং অবিজেপি সহযোগী দলগুলি মিলে তামিলনাড়ুর ৩৯টি কেন্দ্রেই লড়ব।’’
বিজেপি রাজ্য সভাপতি কে আন্নামালাইয়ের আচরণে যে এডিএমকে নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ, চলতি মাসের গোড়াতেই সে কথা জানিয়েছিলেন পলানীস্বামী ঘনিষ্ঠ আর এক নেতা ডি জয়কুমার। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতৃত্বধীন জোট থেকে এডিএমকে বেরিয়ে যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার তাঁর সেই ইঙ্গিত মিলে গিয়েছে। সম্প্রতি, তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী তথা দ্রাবিড় রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব আন্নাদুরাই সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন আন্নামালাই। তাই প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত বলে এডিএমকে জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তামিলনাড়ুতে এনডিএ ছেড়েছিল তামিল চিত্রতারকা তথা প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা বিজয়কান্তের দল ডিএমডিকে।
দ্রাবিড় রাজনীতির আর এক প্রধান দল ডিএমকে গত দু’দশক ধরে কংগ্রেসের সহযোগী। ডিএমকে প্রধান তথা তালিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন সম্প্রতি জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। এই আবহে এডিএমকের সিদ্ধান্ত লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিকে কিছুটা বিপাকে ফেলল বলেই মনে করা হচ্ছে। পড়শি রাজ্য কর্নাটকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার দল জেডিএস গত সপ্তাহেই এনডিএতে শামিল হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই তামিলনাড়ু থেকে দুঃসংবাদ এল বিজেপি কাছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, নতুন পরিস্থিতিতে ডিএমকে-এডিএমকে-কে বাদ দিয়ে অন্য দ্রাবিড় দলগুলিকে নিয়ে জোট করতে পারে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে বিজয়কান্তের পাশাপাশি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বহিষ্কৃত এডিএমকে নেতা ও পন্নীরসেলভমের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অম্বুমণি রামাডসের দল পিএমকের নাম নিয়ে জল্পনা রয়েছে। আলোচনায় রয়েছে, একদা প্রয়াত জয়ললিতার ছায়াসঙ্গিনী শশীকলার ভাইপো প্রাক্তন এডিএমকে প্রধান টিটিভি দীনকরণের দল এএমএমকে-ও।
প্রসঙ্গত, জয়ললিতার মৃত্যুর পর থেকেই তামিলনাড়ুতে এডিএমকে নেতৃত্বের মধ্যে সংঘাতের চোরা স্রোত চলছিল। প্রথমে শশীকলার সমর্থনে কার্যনির্বাহী মুখ্যমন্ত্রী পন্নীরসেলভমকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন পলানী। এর পর শশীকলা দুর্নীতি মামলায় জেলে যাওয়ায় ক্ষমতা নিষ্কণ্টক হয় তাঁর। পনীর এবং পলানী গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে দলও ভাঙে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগের বিজেপির সক্রিয়তায় দুই গোষ্ঠী জোড়া লাগে। উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দলের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পান পন্নীরসেলভম। মুখ্যমন্ত্রী পলানী হন সহ-সমন্বয়কারী। কিন্তু বিধানসভা ভোটে এডিএমকে হেরে যাওয়ার পরে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়। যার জেরে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কৃত হতে হয় পন্নীরসেলভমকে।