হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও বায়ুসেনার আধিকারিকেরা। ছবি: পিটিআই।
ভারতীয় বায়ুসেনার ‘মুকুটে নতুন পালক’ জুড়লেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সোমবার দিল্লির অদূরে উত্তরপ্রদেশের লোনি গাজিয়াবাদ এলাকায় হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য সি-২৯৫ বিমান তুলে দিলেন তিনি। গত ২০ সেপ্টেম্বর গুজরাতের বরোদার বায়ুসেনাঘাঁটিতে স্পেন থেকে প্রথম সি-২৯৫ বিমানটি এসে পৌঁছেছিল। তার আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সে দেশের বিমান নির্মাতা সংস্থা ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’ ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভিআর চৌধুরী এবং স্পেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েকের উপস্থিতিতে সেভিল এয়ারফিল্ডে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম সি-২৯৫ বিমানটি বায়ুসেনার হাতে তুলে দিয়েছিল। ২০ সেপ্টেম্বর বরোদায় আনুষ্ঠানিক অবতরণ পর্বেও হাজির ছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল চৌধুরী।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন সামরিক পরিবহণ বিমান সি-২৯৫ হাতে আসায় লাদাখ, সিকিম কিংবা অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-র দুর্গম ঘাঁটিগুলিতে এ বার সহজে অস্ত্র এবং রসদ পৌঁছে দিতে পারবে ভারতীয় বায়ুসেনা। চিনা ফৌজের আগ্রাসনের আশঙ্কা দেখা দিলেই অগ্রবর্তী সেনাঘাঁটিগুলিতে দ্রুত পৌঁছে দিতে পারবে বাড়তি বাহিনী। সেই সঙ্গে সুবিধা হবে আহত বা অসুস্থ সেনাদের ফিরিয়ে আনা এমনকী, প্রয়োজনে এই বিমান শত্রুপক্ষের উপর নজরদারির কাজেও ব্যবহার করা যায়। এক সঙ্গে ৭১ জন সেনা বা প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম-সহ ৫০ জন প্যারাট্রুপার কমান্ডোকে নিয়ে পাড়ি দিতে পারে সি-২৯৫।
সি-২৯৫ বিমানের নির্মাতা সংস্থা ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’ জানিয়েছে, পরবর্তী পর্যায়ে ভারতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে তৈরি হবে এই বিমান। সহযোগী সংস্থা হিসাবে থাকবে ‘টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের বরোদায় হবে বিমান নির্মাণের কারখানা। প্রসঙ্গত, দু’বছর আগে ৫৬টি সি-২৯৫ বিমানের জন্য এয়ারবাসের সঙ্গে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করেছিল নয়াদিল্লি।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় স্পেনের সংস্থা ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য সি-২৯৫ বিমান বানাতে টাটা গোষ্ঠীর চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, স্পেনের নির্মাতা সংস্থার থেকে ১৬টি বিমান ‘উড়ানের উপযুক্ত অবস্থায়’ ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য আমদানি করা হবে। বাকি ৪০টি ওই সংস্থা এবং টাটা গোষ্ঠীর সহযোগিতায় ভারতেই বানানো হবে। কয়েক বছর আগেই ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই বিমান নির্মাণ শুরু করেছে এয়ারবাস। মাঝারি শক্তির ওই পরিবহণ বিমান ছোট রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে। ফলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডগুলি ব্যবহার করতে পারবে সি-২৯৫।