ফাইল চিত্র।
দিল্লির মসনদ থেকে মোদী বাহিনীকে হঠাতে বিরোধীদের এক সুতোয় বাঁধার প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধী ঐক্যের ‘ছন্নছাড়া’ অবস্থার জন্য সেই ‘লক্ষ্য’ পূরণ হয়নি বলেই মনে করে বিরোধী শিবিরেরই একাংশ।
বছর দু’য়েক পরেই আবার লোকসভা নির্বাচন। এ বার বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে নতুন করে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবারই দিল্লি যাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিরোধী শিবিরের কাছে আদতে লিটমাস পরীক্ষা। প্রশ্ন— এই পরীক্ষায় কি উত্তীর্ণ হতে পারবে মোদী-বিরোধী দলগুলি? যে জল্পনার মধ্যেই কংগ্রেস ও তৃণমূলের ‘স্নায়ুর লড়াই’ এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মমতা দিল্লি রওনা হওয়ার আগে প্রশ্ন উঠছে, এ বারও সব বিরোধী নেতাকে এক ছাতার তলায় আনা কি সম্ভব হবে?
বস্তুত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রার্থী বাছাই নিয়ে মমতার চিঠি কংগ্রেসের অন্দরে ‘অস্থিরতা’-র বাতাবরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছে বিরোধী শিবিরেরই একটি অংশ। ‘বিভাজনের শক্তি’-কে হারাতে ওজনদার প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যেই ২২ জন বিরোধী নেতাকে তৃণমূলনেত্রী চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি করেছে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু সূত্রের খবর, মমতার এ হেন পদক্ষেপকে ‘ভাল চোখে’ দেখেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব।
ঘটনাচক্রে, গত বেশ কিছু দিন ধরেই কংগ্রেস ভাঙিয়ে নিজেদের দল ভারী করছে তৃণমূল। গোয়া বিধানসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস-তৃণমূল ‘তিক্ততা’ প্রকাশ্যে এসে পড়েছিল। জোট না হওয়ায় প্রবীণ কংগ্রেসনেতা পি চিদম্বরমকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত, কয়েক মাস আগে সুস্মিতা দেব, মুকুল সাংমার মতো কংগ্রেসের একের পর এক নেতাকে যে ভাবে তৃণমূল দলে নিয়েছে, তাতে কংগ্রেসের অন্দরে মমতার দলের বিরুদ্ধে ‘অসন্তোষ’ তৈরি হয়েছে বলেই সূত্রের দাবি। তবে, সম্প্রতি সনিয়া কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মমতা টুইট করে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
সনিয়া ও মমতার মধ্যে ‘অম্লমধুর’ সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। ২০২১ সালের বিধানসভার ‘কঠিন’ নির্বাচনে জয়ের পর সনিয়ার কাছে গিয়েছিলেন মমতা। সে সময় রাজধানীতে দু’জনের বৈঠকও হয়। যার জেরে বিরোধী জোটের একটা সম্ভাবনা তৈরিও হয়েছিল। কিন্তু তার পর একাধিক কংগ্রেস নেতাকে ‘ভাঙিয়ে’ তৃণমূল দলে নেওয়ায় দু’পক্ষের সম্পর্কে শৈত্য তৈরি হয়। তার পর থেকেই অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতাদের একাংশ ধারাবাহিক ভাবে বার্তা দিতে থাকেন, কংগ্রেস নয়, বিজেপিকে একমাত্র তৃণমূলই হারাতে পারে!
বিরোধী শিবিরের একাংশের মতে, বিরোধী ঐক্য তৈরিতে ‘বড় ভাই’-এর ভূমিকা কে পালন করবে, তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে ‘টানাপড়েন’ তৈরি হয়েছে। তার ফলে বিরোধী ঐক্যে ‘চিড়’ ধরতে পারে বলে আশঙ্কাও করছে ওই অংশ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।