শতবর্ষ-প্রাচীন শিলচর পুরসভায় কর্মচারীদের কোনও ‘গ্রেডেশন লিস্ট’ নেই। নেই ‘মাস্টার রোল’ বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সম্পূর্ণ তথ্য। চাকরি নিয়মিতকরণের জন্য পাকাপাকি ভাবে কোনও নীতি-নির্দেশিকাও নেই। ৪ মাস আগে যে নীতি তৈরি করে ৪ জনকে নিয়মিত করা হয়েছে, এখনই ওই নীতি বদলে দেওয়ার কথাবার্তা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ৪ জনের চাকরি নিয়মিত করা নিয়েও।
শিলচর পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর জানিয়েছেন, ১৪ জন অনিয়মিত কর্মচারী তাঁর কাছে চাকরি নিয়মিত করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। ২৯ জুলাই পুরবোর্ডের সভায় ঠিক হয়, লাগাতার ৭ বছর যাঁরা চাকরি করেছিলেন, তাঁদের চাকরি নিয়মিত করা হবে। ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন ওই শর্ত পূরণ করেন। নীহারবাবু তাঁদের চাকরি পাকা করেছেন। আজ পুরবোর্ডের সভা এ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে। কংগ্রেস সদস্যদের বক্তব্য, নীতি প্রণয়নের পর আবেদনকারীর মধ্যে তা সীমিত থাকতে পারে না। যাঁরাই শর্ত পূরণ করেছেন, পুরসভায় তাঁদের চাকরি নিয়মিত হওয়ার কথা।
পরে সিদ্ধান্ত হয়, সমস্ত স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মীদের ‘সার্ভিস ডেটা’ তৈরি করা হবে। তার ভিত্তিতে চাকরি নিয়মিত করা হবে। এর আগে নিয়মিত করার শর্ত আবার বোর্ডে চূড়ান্ত করা হবে। তবে যে ৪ জনের চাকরি এর মধ্যে আবেদনের সুবাদে পাকা হয়ে গিয়েছে, তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না। কংগ্রেস নেতা, প্রাক্তন পুর-সভাপতি তমালকান্তি বণিক
বলেন, ‘‘শূন্যপদেরও একটি তালিকা তৈরি করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অনিয়মিত কর্মচারীদের মধ্যে থেকে নিয়ম মেনে সে সব পদ পূরণ করতে হবে।’’
একই ভাবে নতুন করে জলকর ও নর্দমা-কর চাপানোর প্রয়াসও ব্যর্থ হয়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ উল্লেখ করে নতুন কর বসানোর কথা বলতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েন কংগ্রেস সদস্যরা। বিশেষ করে, বিরোধী দলনেতা অলক কর, উপনেতা সজল বণিক, রঞ্জিত রায়, রঞ্জন রায় বলেন— ভোটের আগে জলকর ৫০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়ে এখন নতুন নামে তা আবার বাড়ানোর ফন্দি আঁটা হয়েছে। নর্দমা-কর বসানোর আগে পুরো শহরে নর্দমা তৈরির দাবি তোলেন সকলে। পরে বিজেপির রাজেশ দেব ও অসীমকুমার দাস এখনই নতুন কর না বসানোর প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়, শহরে নিয়মিত জল সরবরাহ ও নর্দমা দ্রুত নির্মাণ করা হবে। সে জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তাঁরা। বিশেষ করে, শিলান্যাসের পরও আটকে থাকা সদরঘাটের দ্বিতীয় প্লান্টটি অবিলম্বে শেষ করার জন্য বিভাগীয় কর্তাদের অনুরোধ জানানো হবে। এর পরই নতুন করে কর বসানো হবে শহরবাসীর উপর।
নতুন করে আপত্তি জানালেও পুরসভার যে রাজস্ব বাড়ানো দরকার, সে জায়গায় সবাই সহমত ব্যক্ত করেন। তাঁদের পরামর্শ, বকেয়া কর আদায় করতে হবে। নীহারবাবু জানিয়েছেন, সেখানেও সমস্যা। এনআরসি-র কাজের জন্য পুরসভার সমস্ত ট্যাক্স কালেকটরদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের জায়গায় ৪ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে কিছু এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা প্রত্যাশিত পরিমাণে কর আদায় করতে পারছেন না। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমস্ত কমিশনার ও এজেন্টদের নিয়ে সভায় বসে সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে কমিশনের হার সামান্য বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। অনাগ্রহীদের বদলে নতুন এজেন্টও নিয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া, খাসজমিতে নির্মিত বস্তি থেকে ঘরপিছু ‘বেটারমেন্ট ফি’ আদায়েরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজেন্টরাই তা সংগ্রহ করবেন।
ঐতিহাসিক গাঁধীমেলা নিয়েও আজ কথাবার্তা হয় বোর্ড বৈঠকে। গাঁধীমেলার ঠিক প্রাক্কালে একই ধাঁচের রাসমেলা একই জায়গায় হতে চলেছে। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তার আয়োজক। পুরসভা তাদের এক মাসের জন্য টিন ভাড়া দিয়েছে। পানীয় জলেরও ব্যবস্থা করেছে। তাতে যে গাঁধীমেলা পুরোপুরি মার খাবে, কংগ্রেস সদস্যরা তা বললে পুরপ্রধান রাসমেলার বিষয় জানেন না বলেই দায় এড়াতে চান। টিন, জলের অনুমতি দেখিয়ে দিলে তিনি আশ্বস্ত করেন, সে ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আগামী ৫ ডিসেম্বর শুধু গাঁধীমেলার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি বিশেষ বোর্ড-সভা ডেকেছেন। বিজেপি-র পক্ষে নীহারবাবুর সঙ্গে সব বিষয়ে গলা মেলান উপসভাপতি চামেলি পাল, অভ্রজিত চক্রবর্তী, মিত্রা রায়।