ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতায় আবার বাংলার মনীষীর নাম। এ বার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘শরণাপন্ন’ হলেন তিনি!
সম্প্রতি এক বণিকসভায় ভিডিয়ো-বক্তৃতায় ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার ডাক দেওয়ার সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার অংশ আবৃত্তি করেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের কথা টেনে এনেছেন দেশি খেলনা তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়েও। এ বার শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়ালের বাইরে পা রেখে দেখে-শুনে-বুঝে পড়াশোনার উদাহরণে প্রধানমন্ত্রীর মুখে বিদ্যাসাগর। বিরোধীদের প্রশ্ন, এত ঘন ঘন বাংলার মনীষী-স্মরণ কি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট মাথায় রেখেই?
শিক্ষা মন্ত্রক আয়োজিত ‘একবিংশ শতাব্দীতে স্কুল শিক্ষা’ শীর্ষক ভিডিয়ো-আলোচনায় আজ প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ, নম্বরের চাপে দফারফা স্কুলের পড়ুয়াদের। স্কুলে তারা কী শিখছে, অনেক বাবা-মা তা জানতেই চান না। মোদীর কথায়, “মার্কশিট এখন পড়ুয়াদের কাছে প্রেসারশিট। আর অভিভাবকদের কাছে প্রেস্টিজশিট।” এই ছবির আমূল বদল নয়া শিক্ষানীতির অন্যতম লক্ষ্য বলে তাঁর দাবি। বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গের অবতারণাও সেই সূত্রে।
স্কুলের বাইরেও শিক্ষার যে বিপুল সম্ভাবনা, পড়ুয়াদের মধ্যে নিজে দেখে-পরখ করে শেখার যে কত আগ্রহ— তা বোঝাতে গিয়েই বিদ্যাসাগরের সেই বিখ্যাত মাইলফলক দেখে ইংরেজি সংখ্যা চেনার গল্প বলেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘গণিত শেখার উদ্দেশ্য শুধু সংখ্যা চেনা কিংবা যোগ-বিয়োগ করতে শেখা নয়। ওই বিষয় তৈরি করে যুক্তিনিষ্ঠ মন। তা শেখার সুযোগও ছড়িয়ে রয়েছে চার পাশে। যেমন, বাবার হাত ধরে কলকাতা যাওয়ার সময়ে মাইলফলক দেখে প্রথমে ইংরেজি সংখ্যা চিনতে পারেননি আট বছরের ঈশ্বরচন্দ্র। তখন তিনি তা জানতেন না। কিন্তু প্রতিটি ফলকে লেখা সংখ্যা বাবার কাছ থেকে জেনে নিতে নিতে কলকাতা পৌঁছনোর সময়ে সেই শিক্ষা তাঁর সারা।’’
আজ স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো-বক্তৃতার ১২৭তম বার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করেছেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডাও। তাঁর টুইট, “আধ্যাত্মিকতা এবং দেশাত্মবোধের মেলবন্ধন ছিল বিবেকানন্দের মধ্যে। তিনি শুধু জীবের মধ্যে ঈশ্বর সেবার কথা বলেননি, পৃথিবীর ভালও ভেবেছিলেন। দেশ গড়ার জন্য তাঁর শিক্ষা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে।” রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো, বিবেকানন্দকেও কি রাজ্যে ভোটের আগে ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরবে বিজেপি?
প্রশ্ন অবশ্য রয়ে গিয়েছে মোদীর শিক্ষা সংক্রান্ত বক্তব্যেও। তিনি বলেছেন, প্রকৃত শিক্ষার জন্য পড়ুয়াদের ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে যাওয়া জরুরি। শিক্ষকদের পরামর্শ দিয়েছেন, স্টেশনে গিয়ে রেলইঞ্জিন, কারখানায় গিয়ে উৎপাদন, গ্রামে গিয়ে পরিবেশ চেনাতে। তাঁর মতে, হস্তচালিত তাঁতে কাপড় বোনা থেকে শুরু করে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখার সরঞ্জাম— যতটা সম্ভব, সবই দেখা উচিত পড়ুয়াদের। বলেছেন, শহরের অনেক নামী স্কুলের পড়ুয়া হয়তো এই সুযোগ কিছুটা পান, কিন্তু অধিকাংশ স্কুলে (বিশেষত গ্রামে) তা বাড়ন্ত।