এই সাধনা পটেল ওরফে ‘জিজি’কে ধরতেই ১০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।
সরকার ‘ইনাম’ রেখেছে ‘পুরা’ ১০ হাজার। তিন মুলুকের (রাজ্যের) পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। ফুলন দেবীর পর চম্বল উপত্যকায় ফের এক দস্যুরানির খোঁজে হন্যে পুলিশ। তবে নাগাল পাওয়া যায়নি বছর তিরিশের সাধনা পটেল ওরফে দস্যুরানি ‘জিজি’র। তাঁর জন্যই রাতের ঘুম ছুটেছে পুলিশের। শুরু হয়েছে ‘জিজি’র বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান— তিন রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে বাড়ানো হচ্ছে সমন্বয়।
ফুলন দেবী ছিলেন আম মহিলা। তবে সাধনা পটেলের রক্তেই রয়েছে ডাকাতি। তাঁর বাবা চুনিলাল পটেল ছিলেন উত্তরপ্রদেশের চিত্রকুট এলাকার কুখ্যাত ডাকাত। সাধনার জন্ম সেখানেই। কিশোরী বয়সেই ছোটখাটো চুরিতে হাত পাকান সাধনা। কিন্তু পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ায় চিত্রকুট ছেড়ে চলে আসেন মধ্যপ্রদেশের সাতনা এলাকায়। সেখানেই পাকাপাকি বসবাস করতে শুরু করেন। শুরু হয় তাঁর ‘নয়া অভিযান’।
কিন্তু কী ভাবে সাধনা থেকে হয়ে উঠলেন ‘জিজি’ তথা দস্যুরানি? পুলিশ জানতে পেরেছে, সাতনা এলাকায় ছোটখাটো দুষ্কর্মের পর একটি ডাকাত দলের সক্রিয় জুনিয়র সদস্য হিসাবে যোগ দেন। অদম্য সাহস, এলাকার খুঁটিনাটি সম্পর্কে নিখুঁত ভাবে ওয়াকিবহাল, অপারেশনের পর তড়িৎ গতিতে এলাকা পাল্টে গা ঢাকা দেওয়ার মতো একাধিক ‘দক্ষতা’য় খুব শীঘ্রই হয়ে ওঠেন ওই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এর মধ্যেই একটি অভিযানে গিয়ে মারা যান ওই দলের সর্দার। তার পর অবিসংবাদিত ভাবেই সাধনা হয়ে ওঠেন দলের মাথা তথা দস্যুরানি। দলে তাঁর নতুন নাম হয় ‘জিজি’। তাঁর নামানুসারেই আত্মপ্রকাশ করে ‘জিজি গ্যাং’।
আরও পডু়ন: ধার করে লটারির টিকিট, রাতারাতি দিনমজুর থেকে কোটিপতি
এই ‘জিজি’ই আপাতত মধ্যপ্রদেশ পুলিশের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। তাই তাঁকে ধরিয়ে দিতে পারলে বা তাঁর সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। সাতনার পুলিশ সুপার সন্তোষ গৌর জানিয়েছেন, ‘‘সম্প্রতি একাধিক ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে সাধনা পটেলের। তাই আমরা ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছি।’’
কিন্তু ‘জিজি’কে ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের অন্তরায় একাধিক। চম্বল উপত্যকার চড়াই-উৎরাই কার্যত হাতের তালুর মতো চেনা এই ‘জিজি’র। তাই দুষ্কর্ম করে গোটা গ্যাং-সহ সহজেই গা ঢাকা দেন ‘জিজি’। তিন রাজ্যে তাঁর ডাকাত দলের যাতায়াতও কার্যত অবাধ। পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে সহজেই পাহাড়ি-জঙ্গলপথে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যেতে পারেন দলের সদস্যরা। আতঙ্ক আর ত্রাস এতটাই যে, ‘জিজি’-র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না পুলিশের ‘সোর্স’রাও। যখন অপারেশনে যায় ‘জিজি-গ্যাং’, তখন আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা-সহ এতটাই তৈরি থাকে যে, পুলিশের ছোট বাহিনী প্রাণ ভয়ে যেতে সাহস পায় না।
আরও পড়ুন: খাস কলকাতার ফরওয়ার্ড ব্লক অফিস চত্বরে পচাগলা লাশ!
পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি নয়াগাঁও এলাকায় একটি অপহরণের ঘটনা ঘটে। প্রচুর জমির মালিক এক ব্যক্তির ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাঁকে ছাড়া হয়। এ ছাড়া কয়েক সপ্তাহ আগে চিত্রকূট এলাকায় গঙ্গা-কাবেরী এক্সপ্রেসের ১৫০ যাত্রীর টাকাপয়সা লুঠের ঘটনাতেও মূল সন্দেহভাজন এই ‘জিজি গ্যাং’। এর বাইরেও একাধিক ডাকাতি, অপহরণের মতো খুনের ঘটনায় উঠে এসেছে চম্বলের ত্রাস এই বাহিনীর নাম। এই দুই ঘটনার পরই ‘জিজি গ্যাং’-এ ইতি টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘সুপ্রিম কোর্ট আমাদের, রাম মন্দির হবেই’, বললেন যোগী মন্ত্রিসভার সদস্য
মধ্যপ্রদেশে যমুনা থেকে উৎপন্ন হয়েছে চম্বল নদী। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের সীমানা নির্ধারণ করেছে এই নদীই। তারপর উত্তরপ্রদেশে গিয়ে ফের যমুনার সঙ্গেই মিশেছে। এই চম্বল নদী অববাহিকাই বহু বছর ধরে কার্যত ডাকাত-দস্যুদের স্বর্গরাজ্য। এই এলাকায় এক সময় ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন দস্যুরানি ফুলন দেবী। ঠাকুরদের হাতে নিজের গণধর্ষণের বদলা নিতে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের বেহমই-তে ঠাকুর সম্প্রদায়ের ২০ জনকে এক সঙ্গে হত্যা করেন এই ফুলন দেবী। দু’বছর গা ঢাকা দেওয়ার পর তিনি এবং তাঁর দলবল ১৯৮৩-র ফেব্রুয়ারিতে আত্মসমর্পণ করেন। ১১ বছর জেলে কাটানোর পর ফুলন দেবী সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়ে দু’বার সাংসদ হন। সরকারি হিসাবে ফুলন দেবীর মৃত্যুর পর এই প্রথম কোনও ডাকাত দলের সন্ধান পেল পুলিশ, যার মাথায় কোনও মহিলা। তিনি ‘জিজি’ ওরফে সাধনা পটেল।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)