Ministry of Home Affairs

জম্মু থেকে দিল্লি, প্রশ্নের মুখে অমিতের মন্ত্রক

জম্মুর রাজৌরি এলাকায় হামলা চালাল জঙ্গিরা। গত কাল রাতের ওই ঘটনায় রাজৌরির ডাংরি এলাকায় একটি বাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালালে মৃত্যু হয় পাঁচ জনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৬
Share:

প্রশ্নের মুখে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ফাইল চিত্র।

নতুন বছরের শুরুতেই প্রশ্নের মুখে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভূমিকা। এক দিকে জম্মুতে বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা আটকাতে ব্যর্থতা, অন্য দিকে দিল্লিতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও, অপরাধীদের আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা ও রাজধানী দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্র তথা অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

Advertisement

সম্প্রতি কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিত ও শিখেদের বেছে বেছে হত্যার একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। এ বার উপত্যকার সীমা পেরিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুর রাজৌরি এলাকায় হামলা চালাল জঙ্গিরা। গত কাল রাতের ওই ঘটনায় রাজৌরির ডাংরি এলাকায় একটি বাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালালে মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। হামলার পরে শুরু হয় তল্লাশি। তারই মধ্যে আজ সকালে মৃত পরিবারের বাড়ির সামনে একটি ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) বিস্ফোরণ হলে মারা যায় একটি শিশু ও কিশোর। মনে করা হচ্ছে, তদন্তস্থলে যাওয়া পুলিশের বড় কর্তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওই বিস্ফোরক রাখা ছিল। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, হামলাস্থল তল্লাশি চালিয়ে ওই আইইডি উদ্ধার করতে না-পারার দায় স্থানীয় পুলিশ ও আধা সেনার। তাঁদের ব্যর্থতার কারণে আজ ওই দু’জনের মৃত্যু হয়। পরিবর্তে বড় পুলিশকর্তা বা রাজনৈতিক নেতারও মৃত্যু হতে পারত।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন ওই বিস্ফোরক তল্লাশিবাহিনীর চোখে পড়ল না? প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ পি কে সেহগলের মতে, “যে ভাবে উপত্যকার পরে এ বার জম্মুতে হিন্দুদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে, তা থেকেই স্পষ্ট কাশ্মীরের পরে এ বার জম্মুতে আতঙ্ক ছড়ানোর কৌশল নিয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা।” এটা রুখতে লাগাতর ব্যর্থ হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফলে কাশ্মীর তো বটেই, জম্মুও যে আর নিরাপদ নয় তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আতশকাচের সামনে গোয়েন্দা বাহিনীর ভূমিকাও। বিরোধীদের মতে, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ইতি ঘটবে বলে সংসদে দাবি করেছিলেন অমিত শাহ। তা তো হয়নি, উল্টে জঙ্গিরা উপত্যকার সীমা ছাড়িয়ে এখন জম্মুতে হামলা চালাচ্ছে। অন্য দিকে কেন্দ্রের সাফাই, কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া হওয়ার কারণে জঙ্গিরা জম্মুকে সহজ নিশানা করার কৌশল নিয়েছে। কেন্দ্র ওই যুক্তি দিলেও, উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ব্যর্থ তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে নতুন বছরের শুরুতেই।

Advertisement

একই ভাবে দিল্লির সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত তরুণীর মামলাকে গোড়া থেকেই ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় কাঠগোড়ার মুখে দিল্লি পুলিশের ভূমিকা। বর্ষবরণের রাতে দিল্লির সুলতানপুরী এলাকায় তরুণীর স্কুটিকে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। তার পরে ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় বারো কিলোমিটারের বেশি রাস্তা। শেষ পর্যন্ত ওই তরুণী যখন গাড়ির তলা থেকে উদ্ধার হন, তখন তাঁর শরীরে কাপড় ছিল না। যার ভিত্তিতে ওই তরুণীর যৌন হেনস্থা করে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে মৃতার পরিবার। দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টির অভিযোগ, মূল অভিযুক্ত মনোজ মিত্তল বিজেপির নেতা। তাই তাঁকে বাঁচাতে গোড়া থেকেই মামলাটিকে সাধারণ দুর্ঘটনা বলে চালাতে চাইছে দিল্লি পুলিশ। আপ-এর বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজের অভিযোগ, “মিত্তল বিজেপির নেতা হওয়ায় দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনা থেকে পুলিশের বড় কর্তারা ওই নেতাকে বাঁচাতে তৎপর হয়ে ওঠেন। ক্লিনচিট দিয়ে দেওয়া হয় মিত্তলকে।”

প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে মৃতার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার আগেই কী ভাবে ওই মৃত্যুকে সাধারণ পথ দুর্ঘটনা বলে জানিয়ে দিয়ে অভিযুক্তকে কার্যত ছাড় দিয়ে দেয় পুলিশ। ফলে রাজধানীর ঘটনাতেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে দিল্লি পুলিশের দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজনৈতিক ও জনতার চাপে পড়ে আজ সন্ধ্যায় অমিত শাহের নির্দেশে দিল্লি পুলিশের কাছে ওই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তা দেখে বিরোধীদের বক্তব্য, বিরোধী রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটার পরেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় কেন্দ্র। এখন দিল্লিতে নাকের ডগায় ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইতে দু’দিন কেন সময় লেগে গেল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের? কেনই বা অভিযুক্তদের বাঁচাতে এত তৎপর দিল্লি পুলিশের কর্তারা! যথারীতি মুখে কুলুপ স্বরাষ্ট্রকর্তাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement