পুরীর সমুদ্র সৈকত। —ফাইল চিত্র
মাস ছয়েক আগেকার ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র বিভীষিকা এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি নীলাচলে। ফের আতঙ্কিত জগন্নাথ মহাপ্রভুর শ্রীক্ষেত্র। কারণ, হুঙ্কার ছাড়ছে নতুন ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। সাগরপাড়ের জটলা, পুরীর মন্দির চত্বরের সিংহারি, দয়িতাপতিদের আলোচনাতেও এখন সেই বুলবুল।
মে মাসে ১৬০-১৭০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ফণীর দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সমুদ্রপাড়ের রাস্তার ধারের ঘরবাড়ি, হোটেল-রেস্তরাঁ, দোকানপাট। কার্তিকের শুক্লনবমীতে জগন্নাথ মন্দিরে যখন লক্ষ মানুষের সমাগম, সেই সময়েই আর একটা ঘূর্ণিঝড়ের আর্বিভাব নিয়ে চিন্তিত নীলাচলবাসী।
রথের মতো না-হলেও কার্তিক পূর্ণিমায় জগন্নাথ দর্শনের জন্য পুরীতে ব্যাপক ভিড় হয়। ভক্তের ঢল নামে নবমী তিথি থেকেই। মন্দিরের অন্যতম পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ সিংহারি বললেন, ‘‘ফণী তছনছ করে দিয়েছিল শহর। ১৫ দিন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না শহরে। টান পড়ে খাবারদাবারেও। ভেঙে যায় রাস্তা, বাতিস্তম্ভ, বাড়ি, হোটেল। তাই বুলবুল আসছে শুনেই ভয় বাড়ছে।’’ তাঁর মুখেই জানা গেল, বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে সে-বার অনেকেই কলকাতায় ছুটেছিলেন পোর্টেবল জেনারেটর কিনতে। চাহিদা এতটাই ছিল যে, বড়বাজারেও জেনারেটার সরবরাহে টান পড়ে যায়।
স্বর্গদ্বারের কাছে সুমদ্রসৈকতে মালা, পাথর, শাঁখ বিক্রি করছিলেন শঙ্কর রাও। জানালেন, তিনি অন্ধ্রের রাও পরিবারের মানুষ। বাপ-ঠাকুরদা জাহাজের মালপত্র ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন। সেই সূত্রেই পুরীতে বাস। পুরীর হোটেলের পিছনে নুলিয়া পাড়ায় থাকেন। বুলবুল নিয়ে আতঙ্কিত শঙ্করও। বললেন, ‘‘জলই আমাদের সব। জলেই আমাদের জীবন ও জীবিকা। কখনও লাইফ গার্ড, কখনও ছবি তোলা, কখনও মালা-পুথি বেচার কাজ করি। সবই সাগরের গায়ে। ফণীর দাপটে জলোচ্ছ্বাসে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। আবার একটু একটু করে উঠে দাঁড়িয়েছি। বুলবুল আসছে শুনে তাই ভয় তো হচ্ছেই।’’ সমুদ্রের পাড়ে যে-সব হোটেল, বাড়ি ভেঙেচুরে গিয়েছিল, সেগুলো আবার সেজেগুজে উঠেছে। আবার সব তছনছ হয়ে যাবে না তো! পুরীর আবহাওয়া দফতরের তরফে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজনকে। তারা এটাও বলছে যে, ফণীর মতো ক্ষমতাশালী নয় বুলবুল। সেই আশ্বাসই আপাতত কিছুটা ভরসা নীলাচলবাসীর।