আফগান রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুনজ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, তালিবান নীতি নিয়ে এমনিতেই ভারত কিছুটা দোলাচলে রয়েছে। সেই দোলাচল আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিলেন নয়াদিল্লিতে কর্মরত আফগান রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুনজ। তালিবানকে হিংসার পথ থেকে সরিয়ে আনতে ভারত তাদের সঙ্গে কথা বলুক মামুনজের এই আবেদন আজ কিছুটা চাপেই ফেলে দিয়েছে মোদী সরকারকে।
এটা ঘটনা, আগের বিদেশনীতি থেকে সরে এসে তালিবানের পাকিস্তান-বিরোধী অংশের সঙ্গে আলোচনার দরজা অঘোষিত ভাবে খুলেছে নয়াদিল্লি। তাতে বিস্তর ঝুঁকি থাকায়, তা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন ও দ্বিধা রয়েছে। আবার এটাও ঘটনাস আজ অগ্নিগর্ভ কাবুল নিয়ে তাজিকিস্তানে এসসিও গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি বৈঠকের পরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শান্তি আলোচনার পথেই আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন একাধিক টুইটে। তবে বিবৃতিতে আবেদন জানানো এক রকম, কিন্তু তলিবানকে শান্তির পথে ফেরাতে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার যে আর্জি আফগান রাষ্ট্রদূত রেখেছেন, তাতে এক কথায় সায় দেওয়া বা না-দেওয়ার আগে বিস্তর ভাবতে হবে নয়াদিল্লিকে।
কারণ, আমেরিকার সেনা এবং ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে ক্রমশ ফিরে যাচ্ছে। অন্য দিকে শান্তি ফেরা দূর স্থান, তালিবানের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষ চলছে আফগান সেনার। দেশের প্রায় ৮০% অস্ত্রের জোরে দখল করে নিয়েছে তালিবান গোষ্ঠী। তারই মধ্যে কাবুলের দিক থেকে সরকারি ভাবে এমন অনুরোধ ভারতের কাছে এই প্রথম। আফগান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য, আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগসূত্র ছিন্ন করতে এবং হিংসা ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতের অংশ হতে তালিবানকে বোঝাক ভারত।
তাজিকিস্তানে এসসিও গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বৈঠকের পরে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর পরপর কয়েকটি টুইটে অবশ্য সেই বার্তাই দিয়েছেন। স্পষ্ট করতে চেয়েছেন ভারতের অবস্থান। জয়শঙ্কর বলেছেন, “একমাত্র শান্তি আলোচনার মাধ্যমেই আফগানিস্তান পরিস্থিতির সমাধান হতে পারে। দোহার আলোচনায় সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ কখনওই তার অতীতের মতো হতে পারে না। গোটা একটা নতুন প্রজন্ম এসে গিয়েছে, যাদের অন্য রকম চাহিদা রয়েছে। আমরা তাদের আশাহত করতে পারি না।” তাঁর কথায়, “এই বিশ্বাসে ঐকান্তিক ভাবে অগ্রসর হওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এমন কিছু শক্তি রয়েছে, যারা সব ভন্ডুল করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।” কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এ ক্ষেত্রে নাম না-করে পাকিস্তানকেই নিশানা করেছেন তিনি।
আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনার মঞ্চে বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, “গোটা বিশ্বই হিংসার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বিরোধী। এই বিষয়টিকে কেউই বৈধতা দেয় না।” তাঁর তালিবানের প্রতি পরামর্শ, “হিংসা ছেড়ে, সাধারণ মানুষের উপর জঙ্গি হামলা বন্ধ করে সংঘাত মেটানো দরকার। সেটা করতে হবে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থকে সম্মান দিয়ে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রতিবেশীরা সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ, এবং চরমপন্থার শিকার না-হয়।”