Gautam Adani

কার ধনুকের তিরে ‘বিদ্ধ’ আদানি!

সাধারণত আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন মেনে লেনদেনের বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর না-মেলা পর্যন্ত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার অ্যাকাউন্ট এ ভাবে ফ্রিজ় করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৫:৫৩
Share:

গৌতম আদানি

সপ্তাহান্তের ছুটি কাটিয়ে শেয়ার বাজার খোলার মুখেই সোমবার সাতসকালে অনিয়মের অভিযোগের তির আদানি গোষ্ঠীর দিকে। সেই গোষ্ঠী, যার কর্ণধার গৌতম আদানির সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতার’ অভিযোগে নরেন্দ্র মোদীর দিকে প্রায়ই আক্রমণ শানান বিরোধীরা। মোদী জমানায় যাঁর সম্পদ বহু গুণ ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে পরিসংখ্যানে ছয়লাপ সমাজমাধ্যম। এ দিন সামনে আসা অভিযোগের জেরে সপ্তাহ শুরুর দিনেই বাজারে মুছে গেল সেই আদানি গোষ্ঠীর ৫৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ! স্বাভাবিক ভাবেই দিনভর পাক খেল জল্পনা, মেঘের পিছন থেকে অভিযোগের বাণ এল কার ধনুক থেকে? তবে কি ফের শুরু হয়ে গেল কর্পোরেট-যুদ্ধ?

Advertisement

গত কয়েক বছরে সংস্থার শেয়ার দর ফুলেফেঁপে ওঠায় আদানির সম্পদ এমন রকেট গতিতে বেড়েছে যে, এখন দেশের ধনীতম মুকেশ অম্বানীর (রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার) ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন তিনি। অনেকে তাই বলছেন, দেশের পয়লা নম্বর ধনকুবের হওয়ার টক্করে যিনি শামিল, তাঁর শত্রুর অভাব হয় কি? বিষয়টি সামনে আসতেই বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামী যে ভাবে সরব হয়েছেন, যে ভাবে বলেছেন অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনার কথা, তাতে জোরালো হয়েছে জল্পনা।

সমস্যার শিকড় কোথায়? আদানি গোষ্ঠীতে টাকা ঢালা তিনটি বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ (ফ্রিজ়) করে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন খবর প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। তাতেই আদানি গোষ্ঠীর আধ ডজন সংস্থার শেয়ার-দরে ধস নামে। গোষ্ঠীর দাবি, এই খবর ভুল। তিন সংস্থার অ্যাকাউন্টই চালু রয়েছে। অথচ ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ় ডিপোজ়িটরি লিমিটেডের (এনএসডিএল) তথ্য বলছে, ৩১ মে ও সেগুলি ফ্রিজ় করা হয়েছে।

Advertisement

সাধারণত আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন মেনে লেনদেনের বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর না-মেলা পর্যন্ত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার অ্যাকাউন্ট এ ভাবে ফ্রিজ় করা হয়। স্বামীর দাবি, ইডি এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করুক।

আলবালা, ক্রেস্টা ও এপিএমএস নামে যে তিন সংস্থার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠীতে তাদের লগ্নি প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। অবাক করার মতো তথ্য হল, এই তিন সংস্থা তাদের প্রায় ৯৫% তহবিলই ঢেলেছে আদানি গোষ্ঠীতে! অথচ ঝুঁকি এড়াতে এ ধরনের সংস্থা সাধারণত লগ্নি করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। আদানিকে ‘ট্রাপিজ আর্টিস্ট’ আখ্যা দিয়ে স্বামীর দাবি, তিনি আইন ভাঙার প্রমাণ দেখছেন। কিন্তু তাঁর আশঙ্কা, ইডি-র পদক্ষেপে অন্তর্ঘাত হতে পারে। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ইডি-র আধিকারিকদের ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’
খতিয়ে দেখা।

আদানি গোষ্ঠীর বক্তব্য, ‘ভুল খবরের’ জেরে লগ্নিকারীদের অর্থ ও সংস্থার সুনামের ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের অন্দরে প্রশ্ন, শেষমেশ অনিয়ম ধরা পড়লে, তার জল গড়াবে কত দূর? তার আঁচ কেন্দ্রের উপরে এসে পড়বে না তো? আমলাদের একাংশেরই প্রশ্ন, অন্য কোনও ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কি আদানি গোষ্ঠীর ক্ষতি করতে সক্রিয়? অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা মনে করাচ্ছেন, “ইউপিএ-সরকারের দ্বিতীয় পর্বে টু-জি স্পেকট্রাম, কয়লা খনি বণ্টনের মতো একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছিল। মনে করা হয়, এর মূলে ছিল কর্পোরেট যুদ্ধ। এ বার?”

একাধিক পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, দেশে করোনা-কালে অর্থনীতি হোঁচট খেলেও, শেয়ার বাজারে শ্রীবৃদ্ধির দৌলতে অনেক ধনকুবেরের সম্পদ বেড়েছে চোখ কপালে তোলার মতো। সেই সূত্রে আদানি এখন দেশে দু’নম্বর তো বটেই, এশিয়ারও অন্যতম ধনী। প্রথম নাম মুকেশ অম্বানীর।

সূত্রের খবর, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থার শেয়ার দরের রেকর্ড গতিতে উত্থান নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-ও। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, এমনিতেই এখন দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার সঙ্গে রেকর্ড উচ্চতায় থাকা শেয়ার বাজারের সাযুজ্য নেই। তার উপরে এখন কোনও কেলেঙ্কারির জেরে বাজারে পতন হলে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নিকরণেও ধাক্কা খাবে সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement