জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল। —ফাইল চিত্র।
জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন এক অভিনেত্রী। গত বুধবার মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্স (বিকেসি) থানায় এফআইআর দায়ের খবর প্রকাশ্যে এল রবিবার। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিনেত্রীর বয়ানের ভিত্তিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬, ৩৫৪ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিনেত্রীর দাবি, ঘটনাটি ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ঘটেছে। বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সে সংস্থার সদর দফতরের পেন্টহাউসে তাঁকে ধর্ষণ করেছেন সজ্জন!
অভিনেত্রীর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করেছেন জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার। বিবৃতিতে অভিনেত্রীর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁর দাবি, সমস্ত অভিযোগই অসত্য এবং ভিত্তিহীন। এই তদন্তে তিনি সব রকম ভাবে সহযোগিতা করবেন। সংবাদমাধ্যম ‘ইকোনমিক্স টাইমস নাও’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবৃতিতে সজ্জন জানিয়েছেন, তিনি আর প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করবেন না এ বিষয়টি নিয়ে। তাঁর যুক্তি, যে হেতু মামলা দায়ের হয়েছে এবং বিষয়টি এখন বিচারাধীন, তাই এ নিয়ে আর কথা না বলাই শ্রেয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, চিকিৎসক-অভিনেত্রীর অভিযোগ, ২০২১ সালে দুবাইয়ে একটি আইপিএল ম্যাচ দেখতে গিয়ে সজ্জনের সঙ্গে তাঁর আলাপ। ভিআইপি বক্সে বসে খেলা দেখার সময় তাঁদের পরিচয় হয়। পরে জয়পুরে সাংসদ প্রফুল্ল পটেলের ছেলের বিয়েতেও সাক্ষাৎ হয় তাঁদের। অভিযোগপত্রে অভিনেত্রী জানান, তাঁদের মধ্যে ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া হয়। তাঁর ভাইয়ের একটি সম্পত্তি কিনতে সজ্জন আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সেই বিষয়টি নিয়ে মুম্বইতেও তাঁরা দেখা করেছেন বলে দাবি করেছেন অভিনেত্রী। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘‘তখন থেকেই আমাকে ‘বেবি’ বলে ডাকতেন সজ্জন। একান্ত সাক্ষাতে প্রায়ই নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলতেন। মাঝেমাঝেই জড়িয়েও ধরতেন। এতে বেশ কয়েক বার আমাকে বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয়েছে।’’
সজ্জন জিন্দলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। ফাইল চিত্র।
মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সে সজ্জনের সংস্থার মূল অফিস। অভিযোগকারিণীর দাবি, গত ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে একটি বৈঠকে যোগ দিতে জিন্দল গোষ্ঠীর অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে অফিসের পেন্টহাউসে নিয়ে যান সজ্জন। সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে দাবি করেছেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বার তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেই সময় তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। তাঁর দাবি, পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা জানতে পেরে তাঁর কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন ‘সজ্জন’। চেয়েছিলেন সব কিছু নিজেদের মধ্যে ‘মিটমাট’ করে নিতে। কিন্তু অভিনেত্রী তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে হুমকি দেওয়া শুরু করে সজ্জন। নম্বরও ব্লক করে দেন। অভিযোগপত্রে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘‘নম্বর ব্লক করার সময় আমাকে হুমকিও দিয়েছেন সজ্জন জিন্দল। ওই ঘটনার কথা পুলিশকে জানালে ফল ভুগতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে আমাকে।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরেও গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮ তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, অভিনেত্রী তাদের জানিয়েছেন যে, তিনি যখন প্রথম বার পুলিশের দ্বারস্থ হন, তাঁর কথায় বিশেষ গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। অভিযোগের কোনও প্রতিলিপিও দেওয়া হয়নি তাঁকে। যার অর্থ, তখন এফআইআর-ই দায়ের করেনি পুলিশ। এর পর গত ৫ ডিসেম্বর অভিনেত্রী বম্বে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। সেই মামলায় উচ্চ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল মুম্বই পুলিশকে। তিন থানার পুলিশকর্তাকেও আদালতে তলব করা হয়েছিল। এর পর গত ১২ ডিসেম্বর পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় আদালত। তা মেনে ১৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ বুধবার এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।
যদিও এফআইআর দায়েরে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে মুম্বই পুলিশ। ডিসিপি দীক্ষিতকুমার গিদাম সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮-কে বলেন, ‘‘আইন মেনেই যা করার করছে মুম্বই পুলিশ। এফআইআর দায়েরে আমাদের দিক থেকে কোনও গাফিলতি ছিল না। মহিলাদের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে মুম্বই পুলিশ।’’ এ ব্যাপারে সজ্জনকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়নি বলেই নিজেদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে সিএনবিসি-টিভি১৮।