—প্রতীকী চিত্র।
আগামী দু’বছরে ভারতে আর সারা বিশ্বে সাত বছরের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সে পথে অন্যতম কাঁটা যে অপুষ্টি, সে কথা সামনে এসেছে আগেও। এ বার ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হল, উপযুক্ত পুষ্টিটুকু নিশ্চিত করেই সংক্রামক যক্ষ্মার ছড়িয়ে পড়া প্রায় অর্ধেক ঠেকানো সম্ভব। কমিয়ে আনা সম্ভব যক্ষ্মায় মৃত্যুও।
গবেষণাপত্রের দু’জন লেখক অনুরাগ ভার্গব ও মাধবী ভার্গব জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের অগস্ট থেকে তিন বছর ধরে তাঁরা ঝাড়খণ্ডের চারটি জেলা জুড়ে একটি পরীক্ষা চালান। ছ’মাস করে ২৮০০ জন যক্ষ্মা রোগীকে উপযুক্ত পথ্য আর তাঁদের পরিবারের ১০,৩৪৫ জনকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ পরিবারই জনজাতির। রেশন পান। তাঁদের মধ্যে এডস বা ব্লাড সুগারের মতো রোগ কম থাকলেও মদ এবং তামাকের ব্যবহার যথেষ্ট বেশি ছিল। আর পরিবারের তিন-জনের এক জন ছিলেন অপুষ্টির শিকার। দেখা গিয়েছে, শুধু উপযুক্ত পুষ্টি নিশ্চিত করেই বিভিন্ন ধরনের যক্ষ্মা ৩৯% আর সংক্রামক যক্ষ্মার ৪৮% ছড়িয়ে পড়া রুখে
দেওয়া যাচ্ছে।
অপুষ্টি যে যক্ষ্মায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, সেই প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বলেছেন, ‘‘অনেক বছর আগেই চেন্নাইয়ের এনআইআরটির একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, যে সমস্ত যক্ষ্মা রোগীর ওজন ৩৫ কেজির কম, তাঁদের মৃত্যুহার ৪৫ কেজির বেশি ওজনের যক্ষ্মা রোগীদের থেকে চার গুণ বেশি।’’ ভার্গবদের সাম্প্রতিক গবেষণাটিতে দেখা গিয়েছে, যক্ষ্মার একটি সংক্রমণ রুখতে গড়ে তিরিশটি পরিবারকে পরিপূরক পুষ্টির জোগান দিতে হচ্ছে। একটি মৃত্যু ঠেকানোর জন্য ৪৭ জন রোগীকে পথ্য দিয়ে সাহয্য করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি কাশীতে যক্ষ্মা দূরীকরণ সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সাল থেকে ৭৫ লক্ষ যক্ষ্মা রোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আইসিএমআর পৃষ্ঠপোষিত ভার্গবদের গবেষণায় অবশ্য রোগীপিছু খাবারের খরচ তুলনায় অনেকটাই বেশি। প্রত্যেক যক্ষ্মা রোগীকে মাসকাবারি ১০ কিলোগ্রাম খাবারের ঝুড়ি দেন তাঁরা। ২০১৯ সালের বাজারদরে তাতে চাল, ডাল, গুঁড়ো দুধ, তেল আর মাল্টি ভিটামিন মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ১১০০ টাকা। আর রোগীর পরিজন পিছু পাঁচ কেজি চাল আর দেড় কেজি ডাল বাবদ খরচ হয়েছিল ৩২৫ টাকা করে। ফলে কেন্দ্রীয় অনুদানে অপুষ্টির চিঁড়ে কতটা ভিজবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।