ঘেরাও করেই সঙ্ঘ পাঠ্যক্রম বদলাল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে

এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হচ্ছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। তার আগে পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করতে কাল উপাচার্যের দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যাপকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০২:০৮
Share:

বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করা নিয়ে গত কাল রাতে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দফতর। সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সদস্যদের তাণ্ডবে বন্ধ করে দিতে হন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করার কাজ। শেষ পর্যন্ত এবিভিপি-র দাবি মেনে, বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যক্রমে যে যে পাঠ্য নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে, সেগুলি বাদ দিয়ে পাঠ্যক্রম তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অধ্যাপকদের একাংশের দাবি— বলপ্রয়োগ করে, হুমকি দিয়ে সঙ্ঘের ছাত্ররা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের পছন্দমতো পাঠ্যক্রম তৈরির যে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটিয়েছে, দেশের আর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তা সতর্কবার্তা হওয়া উচিত।

Advertisement

এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হচ্ছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। তার আগে পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করতে কাল উপাচার্যের দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যাপকেরা। অভিযোগ, ইংরেজির পাঠ্যক্রম নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই উপচার্য়ের দফতরের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করে এবিভিপি। তাদের দাবি, গুজরাত দাঙ্গার আবহে লেখা ‘মানিবেন ওরফে বিবিজান’ গল্পটিকে ইংরেজি পাঠ্যক্রম থেকে সরাতে হবে। এবিভিপি-র মতে, দাঙ্গা সংক্রান্ত কোনও গল্প পড়ানো যাবে না। তা ছাড়া ওই গল্পে সঙ্ঘের শাখা বজরঙ্গ দলের এক নেতাকে নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক সৈকত ঘোষকে মারধর করার হুমকিও দেওয়া হয়। অধ্যাপক ঘোষের কথায়, ‘‘গল্পটি আসলে মানবিকতার জয়গান করে মানবিক মূল্যবোধকেই তুলে ধরেছে। কিন্তু তারা তা শুনতে নারাজ!’’ তিনি জানান, ২০০৪ থেকে পাঠ্যক্রমে থাকা গল্পটি শাসক শিবিরের চাপে বাদ পড়তে চলেছে পাঠ্যক্রম থেকে।

ইংরেজি পাঠ্যক্রমে একই ভাবে আপত্তি করা হয়েছে ‘লিটেরেচার অ্যান্ড কাস্ট’ প্রবন্ধের অন্তর্ভুক্তিকে। এবিভিপি-র বক্তব্য, জাতিভেদ বাড়াবে এই প্রবন্ধটি। উনবিংশ শতাব্দীর ভাষা সাহিত্যে শিল্প বিপ্লব সংক্রান্ত প্রবন্ধে কেন কার্ল মার্ক্স ও এঙ্গেলসের নাম থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এবিভিপি। একই ভাবে আধুনিক ইতিহাস বিষয়ে তাদের আপত্তি উঠেছে ‘নকশালবাড়ি আন্দোলন’-এর উল্লেখে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে গত পাঁচ বছর ধরে ইতিহাসকে পরিবর্তন ও অস্বীকার করার কাজ করে চলেছে সঙ্ঘ। গত কালের ঘটনা তারই প্রতিফলন।’’ কাউন্সিলে থাকা সঙ্ঘ-অনুগত অধ্যাপক রাসাল সিংহদের মতো অধ্যাপকদের অবশ্য দাবি, আধুনিকীকরণের নামে পাঠ্যক্রমে বামপন্থী আদর্শ গোঁজার চেষ্টা হয়েছে। যা শুধু সঙ্ঘ-বিরোধী নয়, জাতীয়তা-বিরোধীও। তাই পড়ুয়ারা বাধা দিয়েছে।

Advertisement

এতে আতঙ্কিত বেশির ভাগ অধ্যাপক। অধ্যাপক সৈকত ঘোষের কথায়, ‘‘বড় মাপের গন্ডগোল হতে পারত। যথেষ্ট নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না। ফলে বাধ্য হয়েই বৈঠক বাতিল করতে হয়।’’ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (ডুটা)-র প্রাক্তন সভাপতি নন্দিতা নারাইনের মতে, রক্ষী থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে এবিভিপি বিক্ষোভ দেখিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। অনেকেরই দাবি, ঘটনার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদত ছিল। ডুটা-র সভাপতি রাজীব রায় বলেন, ‘‘রক্ষী থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ছাত্ররা কাউন্সিল হলের সামনে বিক্ষোভ দেখাল, তার তদন্ত হওয়া দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement