ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ‘গুরুদায়িত্ব’ কাঁধে তোলার পর ত্রিপুরায় পুর নির্বাচন ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম পরীক্ষা। একাধিক ওয়ার্ডে ‘চমকে দিয়ে’ দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল তৃণমূল। সময় যত গড়িয়েছে, উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বিজেপি বনাম তৃণমূল উত্তাপের পারদ ততই চড়েছে। চলতি মাসের শেষে ত্রিপুরার চার কেন্দ্রে (আগরতলা, টাউন বরদোয়ালি, সুরমা, যুবরাজনগর) উপনির্বাচন। যা আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সেমিফাইনাল ম্যাচ বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের অভিষেকের কাছেও এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের। এই প্রেক্ষাপটে উপনির্বাচনে ত্রিপুরার মাটিতে আরও ঘাসফুল ফোটাতে জনতা-জনার্দনকে ‘ভেবে চিন্তে ভোট দেওয়ার’ অনুরোধ করলেন অভিষেক।
সোমবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশে বারংবার অভিষেক বলেছেন, ‘‘বিজেপিকে হারাতে পারে একমাত্র তৃণমূলই। হাজার চোখরাঙানি সত্ত্বেও তৃণমূল সেটা বার বার প্রমাণ করেছে। সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তৃণমূলের হাত শক্ত করুন। দয়া করে বিরোধী ভোট ভাগ করবেন না। অন্য দিকে ভোট দিলে আখেরে বিজেপিরই লাভ হবে। তৃণমূলের লড়াই শুধুমাত্র বিজেপির সঙ্গে। অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়। স্বৈরাচারী শক্তিকে রুখতে হলে মেরুদণ্ড সোজা রেখে নিজের ভোট দিন।’’ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভোট ভাগাভাগি ঠেকাতে যেমন এই আর্জি করলেন তৃণমূল সাংসদ, তেমনই আরও এক বার জনমানসে বিজেপি-কে হারানোর জন্য তৃণমূলের পরাক্রমশীলতাকে তুলে ধরে বিরোধী শিবিরে এক প্রকার ‘বার্তা’ দেওয়ার চেষ্টা করলেন অভিষেক। উল্লেখ্য, আগামী ২৩ জুন ত্রিপুরার যে চার আসনে ভোটগ্রহণ হবে, তার মধ্যে তিনটিই বিজেপির দখলে ছিল। একটি বামেদের দখলে।
বিজেপিকে ত্রিপুরা থেকে ‘উৎখাত’ করার বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় যত দিন না গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তত দিন মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে তৃণমূল। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করব। আগের তৃণমূলের থেকে এখনকার তৃণমূলের অনেক ফারাক। মানুষের জন্য কাজ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যে ভাবে গুন্ডারাজ কায়েম করে ত্রিপুরার মানসম্মান মাটিতে মেশানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সকলকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।’’
বিজেপির মানিক সাহার সরকারকে বিঁধে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘‘বিজেপি একটা প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেনি। বলছে মিসড কলে চাকরি দেবে। কিন্তু তা দেয়নি। বহু শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস সবচেয়ে বেশি এখানে হয়। বাংলায় বেকারত্বের হার যেখানে চার শতাংশ, সেখানে ত্রিপুরায় সেই হার ১৮ শতাংশ। রাস্তা-স্বাস্থ্যব্যবস্থা —সর্বত্রই জরাজীর্ণ অবস্থা।’’ তৃণমূলের উপর বিজেপির আক্রমণ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘২৫ বছর ধরে সিপিএম যে সন্ত্রাস করেছে, তাকেও হার মানিয়েছে এই সরকার। আমরা যাতে মানুষের কাছে পৌঁছতে না পারি, সে কারণে সন্ত্রাস করে আমাদের রোখার চেষ্টা চলানো হচ্ছে। জুলুমবাজি না করলে বিজেপি নির্বাচনে খাতাই খুলতে পারবে না।’’
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি থেকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। এ নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘তৃণমূলকে আটকাতে দুঃশাসনের সাহায্য নিতে হয়েছে বিজেপিকে। এতে বিজেপির হৃদয় থেকে যে মানুষের আস্থা সরে গিয়েছে, সেটা উপলব্ধি করেছেন নেতৃত্ব। তাই এমন একটা লোককে তারা বসিয়েছে, যে দিল্লির রিমোট কন্ট্রোল হিসেবে কাজ করবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।