অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন এবং নাগরিকত্ব নির্ধারণ মেনে নেবে না বাংলা তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আজ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্কে এই মর্মে সরব হলেন তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসক দলের ধর্মীয় অহিষ্ণুতা নিয়ে লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশে আক্রমণ শানান তিনি। যা শুনে অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘আমি প্রথম ওঁর বক্তৃতা শুনলাম। ভালই বলেছেন।’’
অমিত এর আগে একাধিক বার পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে কার্যত হুমকি দিয়ে বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকার’ মতো খুঁজে খুঁজে তাড়ানো হবে। নাম না-করে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন অমিত। লোকসভার বিতর্ক মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে আজ ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার তাসটি সামনে রাখলেন অভিষেক।
রাজনীতির লোকজনের মতে, রাজ্য রাজনীতির কথা মাথায় রেখে রাজধানীতে দাঁড়িয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে বার্তা দিতে চেয়েছেন অভিষেক। বিবেকানন্দ, বল্লভভাই পটেল এবং মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর তিনটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে অভিষেকের প্রশ্ন, সহিষ্ণুতা ও সব ধর্মকে সত্য বলে মানার যে পথ এই মনীষীরা দেখিয়ে গিয়েছেন সেটা ঠিক, না কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্কীর্ণ ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক যে বিল পাশ করাতে চাইছেন, সেটা ঠিক? জবাবে শাহ বলেছেন, ‘‘বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্ররা কি এমন বাংলার কথা ভেবেছিলেন, যেখানে দুর্গাপুজোর বিসর্জনের জন্য মামলা করতে হয়?’’
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ করালেন অমিত শাহ
নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকারের নীতির পার্থক্য তুলে ধরতে অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের ভারতের ধারণায় ইতিবাচক মানসিকতা রয়েছে। আপনাদের ভারতের ধারণা সন্দেহে ভরপুর। আমরা বিশ্বাস করি ভালবাসা, শান্তি ও সম্প্রীতিতে। আপনাদের বিশ্বাস গণপিটুনি, হত্যা ও ঘৃণায়। আমাদের ভারত আশাবাদী, উন্নয়নের জন্য মুখিয়ে থাকে। আপনারা ধ্বংসের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা বিভাজনে বিশ্বাস করেন। আমরা চেষ্টা করছি সকলকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে।’’
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটির সমালোচনা করে আজ মূলত তিনটি প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। এক, কী ভাবে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কারও শরণার্থীর মর্যাদা স্থির করা যায়? দুই, কোন দেশ থেকে এসেছেন তার ভিত্তিতে শরণার্থীদের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারতম্য করা যায় কি? তিন, সন্দেহজনক কারণে কোনও ভারতীয় নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে কি না? অভিষেকের মতে, ‘‘কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এই বিল আনা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: অসাংবিধানিক! মানছেনই না শাহ
কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা চলেছে, অসমে চূড়ান্ত এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি আসলে একই মুদ্রার দুই পিঠ। আজ অভিষেকের বক্তব্যেও ছিল একই সুর। তাঁর কথায়, ‘‘এনআরসি ছিল একটা ফাঁদ। সিএবি তার চেয়েও বড় ফাঁদ। এখানে হিন্দু ও মুসলমানের কথা হচ্ছে। কিন্তু ডাক্তার বা আনাজওয়ালার কাছে গেলে, কিংবা অ্যাম্বুল্যান্স ডাকলে কি প্রশ্ন করা হয়, তিনি হিন্দু না মুসলমান?’’ এনআরসি এবং সিএবি-কে একই বন্ধনীতে এনে অভিষেক বলেন, ‘‘অমিত শাহের আনা বিলটি প্রকৃতপক্ষে হিন্দু-বিরোধী।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার জবাবে বলেন, ‘‘কোনও ফাঁদ নয়। যারা ভোটব্যাঙ্কের জন্য অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিতে চায়, এটা তাদের কাছে ফাঁদ মনে হতে পারে।’’
রাজনীতির লোকজন মনে করছেন নিজেকে ‘গর্বিত ভারতীয়’ ও ‘গর্বিত বাঙালি হিন্দু’ হিসেবে তুলে ধরে তৃণমূলের এই সাংসদ অসমের এনআরসি-তে বাদ পড়া ১১ লক্ষ বাঙালি হিন্দুর সমস্যার কথা বলেছেন। আসলে বার্তা দিতে চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে। পশ্চিমবঙ্গে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত শরণার্থীকে আইনি অধিকার দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দু মতুয়া সম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে মতুয়া ডেভেলপমেন্ট বোর্ড।’’