বাঁদিক থেকে— নরেন্দ্র মোদী এবং অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ফাইল চিত্র।
বিজেপির সুরেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষে সওয়াল করল আম আদমি পার্টি (আপ)। বুধবার অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের সম্পাদক (সংগঠন) সন্দীপ পাঠক ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমরা দেশের সকলের জন্য একই আইনের পক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।’’
লোকসভা ভোটের আগে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্র-নিযুক্ত আইন কমিশনের তরফে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং আমজনতার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘আপ’-এর বক্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।
কারণ, দিল্লির আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের জারি করা অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কেজরিওয়াল। গত ২৩ জুন পটনার নীতীশ কুমারের ডাকে বিরোধী নেতৃত্বের বৈঠকেও হাজির ছিলেন তিনি। ওই বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোদী সরকারের বিভিন্ন বিলের বিরোধিতা করবেন।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদী মধ্যপ্রদেশের ভোপালে বিজেপির বুথ কমিটির সভাপতিদের নিয়ে ‘মেরা বুথ সবসে মজবুত’ কর্মসূচিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘‘কোনও পরিবারে যদি প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা আলাদা আইন থাকে, তা হলে কি সেই সংসার চালানো যায়?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশের এক একটি সম্প্রদায়ের জন্য যদি এক এক রকম আইন থাকে, তা হলে দেশ এগোতে পারে না। সংবিধানেও সকলের জন্য সমান আইনের কথা বলা আছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, ২০২৪ সালে ভোটের আগেই কেন্দ্র যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে তৎপর, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মঙ্গলবার তা স্পষ্ট হয়েছে। মোদীর বক্তব্যের পর আপ নেতার এই মন্তব্য ‘ইঙ্গিতবাহী’ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। সে প্রসঙ্গের উল্লেখ করে সন্দীপ বলেন, ‘‘আম আদমি পার্টি ভারতীয় সংবিধান মেনেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ চায়।’’
বিজেপি-আরএসএসের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে অযোধ্যায় রামমন্দির, ৩৭০ রদ, সিএএ বাস্তবায়িত করেছে মোদী সরকার। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা এখনও বাকি। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিধিকে বিজেপি ‘তুরুপের তাস’ করতে চাইছে বলে বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ। কারণ, এর ফলে মুসলিম সংগঠনগুলি তাদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে বলে আপত্তি তুলবে। আর সেই সুযোগে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলি তখন পিছনের সারিতে চলে গিয়ে মেরুকরণের রাজনীতিই প্রধান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অতীতে ৩৭০ ধারা রদ নিয়ে মোদী সরকারকে সমর্থন করেছিল আপ। এ বার কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পালা?