—ফাইল চিত্র।
ভোটের শুরুতেই উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনকে ৮০ বনাম ২০ শতাংশের লড়াই বলে মন্তব্য করে হিন্দুত্বের মেরুকরণের তাস খেলেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। আজ ফল প্রকাশের পরে ভোটারদের ভোট দেওয়ার যে প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে, বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে, তা থেকে স্পষ্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশের, বিশেষ করে মহিলা সমাজের ভোটও কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা।
দলের ব্যাখ্যা, মূলত তিন তালাকের মতো কুপ্রথা থেকে মুক্তি ও করোনার সময়ে মাসে-মাসে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পাওয়ার যে প্রকল্প কেন্দ্র হাতে নিয়েছিল, তারই সুফল ভোট বাক্সে পেয়েছে দল।
চলতি নির্বাচনে দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশে একটি আসনেও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। তবে বিজেপি শরিক আপনা দল (সোনেলাল) রামপুর জেলার সুয়ার কেন্দ্র থেকে হায়দার আলি খানকে টিকিট দিয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ-র পক্ষে কেবল একটি আসনে লড়া মুসলিম প্রার্থীও আজ হেরে গিয়েছেন ওই কেন্দ্রের সমাজবাদী প্রার্থী বিতর্কিত বাহুবলী নেতা আজম খানের ছেলে আবদুল্লার কাছে। ফলে এই মুহূর্তে এনডিএ-তে এমন কোনও সংখ্যালঘু বিধায়ক নেই যিনি আগামী যোগী মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারেন। যদিও বিজেপির যুক্তি, গত মন্ত্রিসভায় যে ভাবে বিধান পরিষদের সদস্য মহসিন রাজাকে সংখ্যালঘু দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল ঠিক সে ভাবে এবার মহসিন বা তাঁর মতো অন্য কোনও বিধান পরিষদের মুসলিম সংখ্যালঘু সদস্যকে মন্ত্রী করা হতেই পারে।
আজকের ভোট পাওয়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দলের ব্যাখ্যা, বেশ কিছু সংখ্যালঘু এলাকায় বেশ ভাল ফল করেছে বিজেপি। বিশেষ করে মুজফফ্রনগর ও শামলি কেন্দ্রে ৪১ শতাংশ ভোটার মুসলিম। তা সত্ত্বেও দুই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৫১ শতাংশের বেশি। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘ওই কেন্দ্রের যাদব ভোটারেরা বিজেপিকে যে ভোট দেবেন না তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। ফলে সমীকরণের হিসাব স্পষ্ট করে দিয়েছে মুসলিম ভোটারেরা আমাদের ভোট দিয়েছেন।’’
একই ভাবে মুসলিম অধ্যুষিত হয়েও বিজেপি প্রার্থীরা জিতেছেন সাহারানপুর, আলিগড় কেন্দ্রে। বিজেপির ওই নেতার ব্যাখ্যা মুসলিম এলাকাগুলিতে ভোট প্রাপ্তির হিসাব দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে সংখ্যালঘু সমাজের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে রয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু মহিলা সমাজ। উত্তরপ্রদেশের পুরুষেরা যেখানে এসপি-কে এককাট্টা হয়ে সমর্থন করেছেন তখন মুসলিম মহিলা সমাজের একাংশ নিশ্চুপে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। সম্ভবত তিন তালাকের অভিশাপকে দূর করতে পারা, করোনা কালে পরিবারের পুরুষদের আয়-উর্পাজন কিছু না থাকলেও মাসে মাসে পরিবারপিছু খাদ্যশস্য পৌঁছে যাওয়া, উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা আগের চেয়ে ভাল হওয়া দলের পক্ষে গিয়েছে।
দু’বছর আগে বিহারে সরকার গঠনের প্রশ্নে নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠলেও, পাশের রাজ্যে ভাল ফল করতে ব্যর্থ হলেন হায়দরাবাদের এমআইএম দলের প্রধান আসাদ্দুদিন ওয়েইসি। ভোট গণনার শেষে আসন তো জোটেইনি, উপরন্ত দল ভোট পেয়েছে মাত্র ০.৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে মুবারকপুর আসন থেকে প্রাক্তন বিএসপি বিধায়ক গুড্ডু জামিলকে দাঁড় করিয়েছিল দল। কিন্ত সমাজবাদী পার্টির কাছে হেরে গিয়েছেন তিনি।
যোগীর পাল্টা চালে সংখ্যালঘু মেরুকরণের প্রশ্নেও প্রবল ভাবে সক্রিয় হয়েছিলেন ওয়েইসি। অনেকের মতে, মূলত বিজেপি-বিরোধী মুসলিম ভোট যাতে কেবল এসপি-র ঘরে না যায় তাই ওই বিভাজনের রাজনীতির লক্ষ্যে ওয়েইসিকে দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। ভোটের প্রাথমিক ফলে স্পষ্ট, বেশ কিছু কেন্দ্রে মুসলিম ভোটে বিভাজন ঘটিয়ে এসপি প্রার্থীর লড়াইকে আরও কঠিন করে দিয়েছে এমআইএম।