হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণার নয়া জাল। প্রতীকি ছবি।
হোয়াটসঅ্যাপে নয়া বিপদ। প্রিয় জন বিপদে পড়েছেন, এই বার্তা পাঠিয়ে রমরমিয়ে চলছে প্রতারণার কারবার। ইতিমধ্যেই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে এই নয়া বিপদ। সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর বাসিন্দা ৫৮ বছরের সরলা গর্গ (নাম ও স্থান পরিবর্তিত)। অধুনা বিদেশের বাসিন্দা ছেলে-মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের সহজতম মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ। আর পাঁচ জনের মতো ইচ্ছেমতো কথা বলা বা বার্তা আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে সরলা চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন এই অ্যাপ্লিকেশনটির উপর। এক দিন সরলার মোবাইলে ছেলের বার্তা, ‘মা, খুব বিপদে পড়েছি। এখনই টাকা পাঠাও।’ আচমকা এমন বার্তায় হতচকিত যান প্রৌঢ়া। আগুপিছু না ভেবে হোয়াটসঅ্যাপেই পাঠিয়ে দেন টাকা। কিছু ক্ষণ পর প্রৌঢ়া হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেন ছেলেকে। সব শুনে ছেলে তো অবাক, আর মায়ের মাথায় হাত!
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিক এই কায়দায় প্রতারণার জাল বিছানো রয়েছে দুনিয়ার জনপ্রিয়তম বার্তা পাঠানোর এই অ্যাপ্লিকেশনে। ইদানীং যা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। এই ঘটনার পর সরলা বলেন, ‘‘আমার সন্তানদের খুবই ভালবাসি। সন্তান বিপদে পড়েছে জানতে পারলে কোন মা চুপ করে বসে থাকতে পারে? আমার মনে হয় প্রতারকরা বেছে বেছে বয়স্ক মায়েদের নিশানা করছে। কারণ ছেলে-মেয়ে বিপদে আছে জানতে পারলে মায়েরা স্থির থাকতে পারেন না। তখন তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করাও সহজ।’’
ইংল্যান্ডের ‘ন্যাশনাল ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ডস’-এর হিসেব অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে বসবাসকারী ৫৯ শতাংশ মানুষ এমন বার্তা পেয়েছেন। প্রতারণা যে চলছে তা স্বীকার করে নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপও। এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ফ্রেন্ড ইন নিড’ কাণ্ড। ‘ন্যাশনাল ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ডস’-এর পরামর্শ, ‘এমন কোনও বার্তায় হতবাক হয়ে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠিয়ে দেবেন না। সবচেয়ে আগে সেই নম্বরে ফোন করুন কিংবা ভয়েজ নোট পাঠান। তা হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে সন্তান কিংবা বন্ধু সত্যিই বিপদে আছেন কি না।’
হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘আপনি যদি এমন কোনও বার্তা পান, তা হলে ঘাবড়ে না গিয়ে দ্রুত ওই নম্বরে ফোন করুন। কারণ বন্ধু বা প্রিয় জন বিপদে পড়লে তাঁকে ফোন করে কথা বলাই কাম্য।’’ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতারকরা আপনার প্রিয় জন বা বন্ধুর নম্বর ‘ক্লোন’ করে তা এই সব কাজে ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক কারও ফোন হারিয়ে গেলে। কারণ সেই হারানো ফোন থেকে প্রতারণার ফাঁদ পাতা আরও সহজ। তাই এমন বিপদগ্রস্ত কারও বার্তা পেলে দ্রুত টাকা না পাঠিয়ে তাঁকে ফোন করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
সব মিলিয়ে বিশ্বের জনপ্রিয়তম বার্তা পাঠানোর অ্যাপ্লিকেশন ঘিরে নতুন করে আশঙ্কার বাতাবরণ।