প্রতীকী ছবি।
রামনগর কান্ডা। এই শব্দের সূত্র ধরেই প্রযুক্তির সাহায্যে কার্যত অসাধ্য সাধন করেছেন বাংলাদেশের চিত্র সাংবাদিক শামসুল হুদা। তাঁর তৎপরতাতেই বাংলাদেশের একটি আশ্রমে আশ্রয় পাওয়া এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয়ের বাড়ির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথাও বলেছেন ওই ব্যক্তি। এখন বাংলাদেশ থেকে উত্তরপ্রদেশে নিজের বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় তিনি।
জানা গিয়েছে, প্রায় দেড় বছর আগে উত্তরপ্রদেশের গ্রামের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ওই যুবক। অ্যামেচার ভিডিয়ো সোসাইটি বাংলাদেশ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল জানান, গত বছরের জুনে নীলমাফারি জেলার ডিমলায় এক রিকশা চালক ওই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ডিমলা থানায় পৌঁছে দেন। ওই যুবকের কোমরের হাড় ভাঙা ছিল। তাই তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তাঁর স্থান হয় রংপুরের একটি আশ্রমে। গত বছর ওই আশ্রমে তাঁকে দেখেন শামসুল। তিনি বলেন, ‘‘হিন্দিভাষী ওই ব্যক্তির কথা থেকে রামনগর কান্ডা কথাটি বুঝতে পারি। তিনি ভারতের বাসিন্দা বুঝতে পারলেও ভারতের কোথায় তাঁর বাড়ি, তা বুঝতে পারিনি।’’ কিন্তু হাল ছাড়েননি শামসুল। তিনি রামনগর কান্ডা শব্দটি দিয়ে গুগল ম্যাপে সার্চ করেন। সেখান থেকে জানতে পারেন, রামনগর কান্ডা উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় অবস্থিত। কিন্তু রামনগর কান্ডার কোথায় ওই ব্যক্তির বাড়ি, তা জানার জন্য শামসুল খোঁজ করে ফোন করেন লখনউ রেডিয়ো ক্লাবের সেক্রেটারি দীনেশচন্দ্র শর্মাকে। শামসুল জানতে পারেন ওই ব্যক্তির বাড়ি রামনগর কান্ডার নিধি পুরওয়া গ্রামে। দীনেশ বলেন, ‘‘আমি খোঁজখবর করে শামসুলকে নিধি পুরওয়া গ্রামের প্রধানের নম্বর দিই।’’ সেই প্রধানকে ফোন করে ওই ব্যক্তির পরিবারের খোঁজ পান শামসুল। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বাবা-মা-বোনের কথাও বলিয়ে দেন তিনি। প্রায় দেড় বছর পরে বাংলাদেশে বাড়ির ছেলেকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর আপনজনেরা।
ওই ব্যক্তির মা ফোনে বলেন, ‘‘দেড় বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ছেলে। সে মানসিক ভারসাম্যহীন। অনেক চেষ্টা করেও ছেলের কোনও খোঁজ মেলেনি।’’ সেই ছেলে ভারত থেকে কী ভাবে বাংলাদেশে পৌঁছে গেলেন, তা বুঝতে পারছেন না তাঁর বাড়ির লোকজন। এখন ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ করছে পরিবার।
শামসুল জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তিনিও ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে মেল করে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে তাঁর বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। আরও বেশি আনন্দ পাব, যে দিন ওই ব্যক্তি বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন।’’