প্রতীকী ছবি।
লখিমপুর খেরিতে দুই বোনকে ধর্ষণের পরে শ্বাসরোধ করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মিরাটে অবশ্য যৌন হেনস্থা ও অপমান থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী।
পাঁচ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ১৯ বছরের তরুণী। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শুক্রবার মৃত্যু হয় ভানিয়া আসাদ শেখ নামে ওই তরুণীর।
মিরাটের এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরে পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, ওই তরুণীকে স্বামী বিবেকানন্দ সুভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে ভর্তি করার পরেও পুলিশকে জানায়নি। সমাজমাধ্যম সূত্রে বিষয়টি প্রথম নজরে আসে পুলিশের। এর পরেই পদক্ষেপ করে পুলিশ। পরে ওই তরুণীর বাবাও অভিযোগ জানান। পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। ভানিয়ার মোবাইল ফোনও ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠিয়েছে পুলিশ।
ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস)-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন ভানিয়া। অভিযোগ, ভানিয়ার সহপাঠী সিদ্ধান্ত কুমার পওয়ার (২০) গত এক সপ্তাহ ধরে উত্ত্যক্ত করছিল তাঁকে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত বুধবার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যেই ভানিয়ার যৌন হেনস্থার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনও মতে আত্মরক্ষা করেন ভানিয়া। পাল্টা ভানিয়াকে দু’বার চড় মারে সিদ্ধান্ত। এর পরেই রাগে, অপমানে, দুঃখে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের পাঁচ তলা থেকে ঝাঁপ দেন ভানিয়া। মেয়ের দুরবস্থার খবর পাওয়ার পরে ভানিয়ার বাবা জানি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর আক্ষেপ, মেয়েকে ডেন্টাল সার্জেন দেখতে চেয়েছিলেন। তার বদলে এই পরিণতি দেখতে হল।
পুলিশ সুপার কেশব কুমার জানিয়েছেন, ভানিয়া দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান। সিদ্ধান্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। সিদ্ধান্তকে আদালতে হাজির করা হলে, বিচারক তাকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
জানি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজেশ কম্বোজ জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তের মুখে ভানিয়ার নখের আঁচড় ছিল। তার থেকে পুলিশের অনুমান, চড় খাওয়ার পরে প্রত্যাঘাতের চেষ্টা করেছিলেন ভানিয়া। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ।
হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও এমন গুরুতর ঘটনা পুলিশকে না জানানোর বিষয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি জানিয়েছেন, ভানিয়াকে প্রাণে বাঁচাতে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা হয়েছিল। তাই পুলিশকে জানাতে দেরি হয়। বিএসপি নেতা ইমরান মাসুদ অবশ্য এই ঘটনায় যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে মহিলারা সুরক্ষিত নন। ন্যাশনাল মাইনরিটি ফ্রন্টের সদস্য মিরাজুদ্দিন আহমেদ ভানিয়ার পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন।
অনেকের মতে, উত্তরপ্রদেশে এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যোগী আমলে যতই সুশাসনের দাবি করা হোক, রাজ্যে মহিলাদের উপরে একের পর এক ধর্ষণ, খুন, নিগ্রহের ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক কালে লখিমপুর খেরি, কনৌজের ঘটনা সামনে এসেছে। অনেক সময়েই অপরাধীদের জাত, বর্ণ নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগও উঠেছে প্রশাসনিক স্তরে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কড়া পদক্ষেপের বার্তা মেলেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের।