মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বছরের পর বছর ধরে কূটনৈতিক টানাপড়েন এবং আইনি বাধার পর, ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে ভারতে ফেরানো হয়েছে। গত সপ্তাহেই পাকিস্তান বংশোদ্ভূত কানাডার ব্যবসায়ী রানাকে আমেরিকা থেকে ভারতে নিয়ে এসেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে রানার ঠিকানা দিল্লির এনআইএ-র সদর দফতরের গারদের ছোট্ট কুঠুরি! ২৪ ঘণ্টা কড়া নজরদারিতে সেই কুঠুরিতে দিন কাটছে তাঁর। সেখানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁকে জেরা করছেন তদন্তকারীরা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা জেরা করা হচ্ছে রানাকে।
এনআইএ সূত্রে খবর, হেফাজতে নেওয়ার পর তিনটি জিনিস চেয়েছিলেন রানা। তার মধ্যে রয়েছে কাগজ, কলম এবং কোরান। জেরাপর্বের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় লেখালিখি করছেন। দিনে পাঁচ বার নমাজপাঠ করছেন রানা। তাঁকে পাহারা দেওয়ার জন্য দু’জন নিরাপত্তাকর্মীকে সর্ব ক্ষণের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা অন্তর অন্তর তাঁর শারীরিক পরীক্ষাও করা হচ্ছে। আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতিও পেয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, হেফাজতে বিশেষ খাবারের জন্য আবেদন করেননি রানা। অন্য অভিযুক্তদের যা খেতে দেওয়া হয়, সেই খাবারই দেওয়া হচ্ছে রানাকে। তা-ই খাচ্ছেন।
রানাকে জেরা করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে বলেই খবর এনআইএ সূত্রে। মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক, কী ভাবে পরিচয়— তা-ও কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। তাঁর কল রেকর্ড, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ এবং অন্যান্য নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রানাকে জেরা করছেন তদন্তকারীরা। হেডলির সঙ্গে রানার ফোনালাপও বিশ্লেষণ করে দেখছেন তদন্তকারীরা। মুম্বই হামলার আগে দুবাইয়ে রানার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল দুবাইনিবাসী এক ব্যক্তির। সূত্রের খবর, এনআইএ অফিসারেরা মনে করেন, মুম্বই হামলার খবর ওই ব্যক্তির কাছে ছিল। তাঁর খোঁজও শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০০৮ সালে রানাকে ভারতে যেতে নিষেধ করেছিলেন হেডলি ওরফে দাউদ গিলানি। ভারতে শীঘ্রই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। অভিযোগ, হেডলিই রানার সঙ্গে এক ষড়যন্ত্রীর দিল্লিতে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সূত্র বলছে, তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, সেই তৃতীয় ব্যক্তি কি পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে যুক্ত? তিনি পাকিস্তানের সেনা বা কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।