দেশভাগের পরে ছিন্নমূল হয়ে এসেছিলেন লাহৌর থেকে। তখন তিনি বালক। আজ তিনি সত্তরোর্ধ্ব। এক একে হারিয়েছেন স্ত্রী, তিন সন্তান এবং নাতিকে। তারপরেও জীবনের কাছে অভিযোগ নেই। দিল্লির ওমলেট-ওয়ালার। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
সাতাত্তরটি বসন্ত কাটিয়ে পেয়েছেন নতুন পরিচয়। এখন সবাই তাঁকে চেনে দিল্লির ‘ওমলেটওয়ালে’ বা ‘ওমলেট আঙ্কল’ নামে। এর আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে তাঁর ‘বলবীর সিংহ’ পরিচয়। দিল্লির প্রগতি ময়দান মেট্রো স্টেশনের সামনে তাঁর স্টলের খাবারের নাম ‘সর্দারজি কা ওমলেট’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
প্রগতি ময়দান স্টেশনের সামনে একটি বড় অশ্বত্থ গাছের ছায়ায় তাঁর অস্থায়ী দোকান। রোজ দুপুরে দোকান পাতেন তিনি। বড় দু’টি পাথর। তার উপর টায়ার। টায়ারের উপরে রাখে থাকে কাঠের তক্তা। তার উপরে স্টোভ জ্বালিয়ে খাবার তৈরি করে বলিরেখা পড়া দু’টি হাত। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
শরীরে বলিরেখাকে মনে প্রবেশ করতে দেননি বলবীর সিংহ। থাকেন অপরিসর ছোট একটি ঘরে। রোজ সকালে উঠে বাড়ির কাজকর্ম নিজেই সারেন। তারপর দুপুরবেলার গন্তব্য দরিয়াগঞ্জের বাজার। সেখান থেকে পাউরুটি, ডিম, প্রয়োজনীয় অন্য কাঁচামাল কিনে আনেন। বিকেলবেলা শুরু হয় দোকান। চলে ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পেরিয়ে। (ছবি: শাটারস্টক)
কয়েক বছরের মধ্যে আপনজনেরা চলে গিয়েছেন বলবীরকে ছেড়ে। তাঁর বড় ছেলে মারা যান ১৯৮৭ সালে। সেই মানসিক আঘাত সহ্য করতে পারেননি বলবীরের স্ত্রী। তিনি মারা যান ১৯৯২-এ। এখানেই শেষ হল না শোকের পরিধি। ১৯৯৮ আর ২০১৩, দেড় দশকের মধ্যে তিনি হারান মেজো আর ছোট ছেলেকে। তার তিন বছর পরে নাতির মৃত্যু সম্পূর্ণ করে বলবীরের একাকিত্বের বৃত্ত। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
বয়স আর শোকের ভারে বলবীর তখন প্রায় স্তব্ধ। আর পারলেন না সাইকেল সারানো, টায়ার মেরামতির কাজ। ভাবলেন, ছোট ছেলে যা করতেন, সেটাই করবেন। ওমলেট বানাবেন। শিখেছিলেন ছেলেকে দেখেই। বছর তিনেক আগে সেই শুরু। (ছবি: শাটারস্টক)
তার পর থেকে সেই ওমলেটের দোকানের চেনা বৃত্তেই ঘুরছে বৃদ্ধের জীবন। রোজ দুপুর থেকে গভীর রাত অবধি খোলা থাকে তাঁর দোকান। পাউরুটি-ওমলেট ছাড়াও পাওয়া যায় ডিমসিদ্ধ এবং পোচ। (ছবি: শাটারস্টক )
তবে তাঁর হাতের স্বাদ পেতে মানতে হবে কিছু শর্ত। তিনি ঢিমে আঁচে দেশি ঘিয়ে ডিম ভাজেন। খাবার তৈরি করতে সময় লাগে। তাই তাঁর দোকানে খেতে গেলে হাতে সময় নিয়ে যেতে হবে। তাড়াহুড়ো করলে হবে না, আগেই জানিয়ে দেন বলবীর। (ছবি: শাটারস্টক )
প্রগতি ময়দান স্টেশনের কাছেই এক অপরিসর ঘরে থাকেন বৃদ্ধ বলবীর। জীবনযাপনের উপকরণও যৎসামান্য। অর্থসংস্থানের জন্য শৈশবে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ ধরে মাটিও কোপাতে হয়েছে। জীবনের উপান্তে পৌঁছেও কোনও পরিশ্রমে বলবীর ভেঙে পড়েন না। (ছবি: শাটারস্টক ও সোশ্যাল মিডিয়া)
এত ঘাত প্রতিঘাতের পরেও জীবনের প্রতি কোনও অভিযোগ নেই বৃদ্ধের। তাঁর দাবি, জীবনে কোনওদিন তাঁকে ওষুধ খেতে হয়নি। তিনি যে সুস্থ আছেন, সে টুকুর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান বলবীর সিংহ। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)