প্রতিবাদ। শুক্রবার কলকাতায় পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ। তার পর দিল্লি। এর পর একে একে পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ়, কেরলের পরে আজ মধ্যপ্রদেশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও এখন বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের নতুন নাগরিকত্ব আইন কোনও ভাবেই তাঁদের রাজ্যে প্রয়োগ হতে দেবেন না। এমনকি আজ মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকারের শরিক কংগ্রেসের এক মন্ত্রীও বলেছেন, সে রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রয়োগ করতে দেবেন না। তৃণমূল, আপ, সিপিএম এবং শেষে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি থেকে একসুরে প্রতিবাদের ডাক ওঠায় আজ তড়িঘড়ি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, এটি একটি কেন্দ্রীয় আইন। তাই ওই আইন সব রাজ্যেই প্রযোজ্য হবে। কোনও রাজ্য সরকারের তা আটকানোর অধিকার নেই।
মমতা ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, এনআরসি এবং সিএবি— দু’টির কোনওটিরই প্রয়োগ তিনি পশ্চিমবঙ্গে হতে দেবেন না। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করা হবে। অনেকটাই এক সুর অন্য মুখ্যমন্ত্রীদেরও। কিন্তু একটি কেন্দ্রীয় আইনের প্রয়োগ কোন পথে ঠেকাবে রাজ্যগুলি, সে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘অসাংবিধানিক আইন। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইন কী ভাবে আটকানো যায়, তা দেখতে হবে।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য জানিয়েছে, নাগরিকত্বের বিষয়টি সংবিধানের সপ্তম তফসিলের অধীনে রয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্গত। তাই সব রাজ্যই ওই আইন মানতে বাধ্য। কোনও রাজ্য নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োগ প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ করব না— এমন কোনও ক্ষমতা কোনও রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়নি। ভারতের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কোনও রাজ্যকে সেই ক্ষমতা দেয় না।’’
নীতিগত ভাবে রাজ্যের পক্ষে যে কেন্দ্রীয় আইনের প্রয়োগ আটকানো সম্ভব নয়, তা স্বীকার করে নিচ্ছে তৃণমূলের একাংশ। দলের ওই অবস্থান নিয়ে তৃণমূল নেতাদের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রশ্নটি কেন্দ্রীয় আইন বা রাজ্য আইনের নয়। মূল বিষয়টি হল রাজনৈতিক ও সামাজিক জনমত তৈরি করে সিঙ্গুরের মতো গণ-আন্দোলনের আবহ তৈরি করা। যাতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এর প্রতিবাদে পথে নামে। মোদী সরকারের পাল্টা যুক্তি, কেন্দ্রীয় আইনকে এ ভাবে উপেক্ষা করা বা আটকানো যায় না। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে ওই ধাঁচের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। রাজ্য যদি কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগে সমস্যার সৃষ্টি করে, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রথমে সংবিধানের ৩৫৫ ও পরে ৩৫৬ ধারা পর্যন্ত প্রয়োগ করতে পারে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: গদির লোভেই আন্দোলনে? প্রশ্ন ‘সর্বাদাকে’
তবে পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচে একের পর এক রাজ্য বিরোধিতায় এগিয়ে আসায় উৎসাহিত তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, যদি একা পশ্চিমবঙ্গ ওই আইনের বিরোধিতায় সরব থাকত, তা হলে কেন্দ্রের পক্ষে কড়া পদক্ষেপ করা সুবিধাজনক হত। কিন্তু এখন যখন একের পর এক রাজ্য ওই আইনের বিরোধিতায় এগিয়ে এসেছে, তখন এত সংখ্যক রাজ্যকে সংবিধানের ৩৫৫ বা ৩৫৬-র ভয় দেখানো কঠিন। কিন্তু যে ভাবে আজ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে এই আইন ঘিরে ঝামেলার খবর এসেছে, তার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে রাজ্য বিজেপি। তাদের দাবি, রাজ্যের মুসলিমদের ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। কেন না নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী যে মুসলিমরা ইতিমধ্যেই ভারতের নাগরিক, তাঁদের চিন্তার কিছু নেই। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূলের প্রতিবাদ শুনে মনে হচ্ছে, দেশের সব মুসলিমদের নাগরিকত্ব চলে যাবে। আইন তো তা বলে না।’’ বিজেপি শিবিরের দাবি, মমতার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হিন্দুদের বড় অংশ তাদের ছাতার তলায় আসবে। তৃণমূলের একাংশও নতুন আইনের বিরোধ নিয়ে দ্বিধায়।