Tripura

Bangladesh: এ পারের ভালবাসা মেখে ফিরলেন শাহজাহানরা

গুরুতর জখম অবস্থায় শাহজাহানকে ত্রিপুরা সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ার পাশ থেকে উদ্ধার করেছিলেন ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের জওয়ান দিলীপ দাস।

Advertisement

বাপী রায়চৌধুরী

আগরতলা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৬
Share:

দিলীপ দাস, শাহজাহান ও তাঁর বাবা মানিক মিয়াঁ। বৃহস্পতিবার আগরতলা-আখাউড়া চেকপোস্টে। নিজস্ব চিত্র

আগরতলা-আখাউড়া চেকপোস্টের জিরো লাইনে আজ বাতাস ভারী হয়ে উঠল কান্নার আওয়াজে। এ কান্না দীর্ঘদিন পরে স্বজনদের কাছে পাওয়ার ও ঘরে ফেরার আনন্দে। আবার এ কান্নায় বিদায়ের বেদনাও। ছ’জন বাংলাদেশিকে আজ তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল। তাঁদের মধ্যে শাহজাহানকে কান-হাত কেটে মৃতপ্রায় অবস্থায় কাঁটা তারের বেড়ার কাছে ফেলে গিয়েছিল মামা। বাকিরা এ পারে এসে পড়েছিলেন ভুলবশত। সকলেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁদের মধ্যে আল্পনা খাতুন দেশে ফিরলেন দশ বছর পরে।

Advertisement

গুরুতর জখম অবস্থায় শাহজাহানকে ত্রিপুরা সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ার পাশ থেকে উদ্ধার করেছিলেন ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের জওয়ান দিলীপ দাস। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে তাঁর শুশ্রূষা, চিকিৎসা ও দেখভাল করেছেন দিলীপ ও তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না দেব। তাঁদের চেষ্টাতেই শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে তরুণ শাহজাহান আজ বাবার কাছে ফিরে গেলেন।

শাহজাহান জানিয়েছেন, সাড়ে তিন বছর আগে এক দিন তাঁর মামা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। এতে তাঁর বাঁ কান ও ডান হাত পুরো কেটে যায়। তার পরে তাঁকে মৃত ভেবে বেড়ার এ পারে ছুড়ে ফেলে দেয়। ঘটনাটি ঘটে, ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার কৈলাশহরের ইরানি থানার অধীন শ্রীরামপুরে। সীমান্ত সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হাবিলদার দিলীপ তাঁকে উদ্ধার করেন। দিলীপের বয়ানে: তখন ও মৃতপ্রায়। তড়িঘড়ি কৈলাশহরের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে রেফার করা হয় আগরতলার গোবিন্দবল্লভ পন্থ হাসপাতালে। সেখানে সে সুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু সঙ্গে কোনও পরিচয়পত্র না থাকায় হাসপাতাল থেকে ছুটি করাতে সমস্যা হচ্ছিল। সুপারের সঙ্গে কথা বলে সাময়িক ভাবে হাসপাতালেই ওর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। শাহজাহানের খাবারের জন্য এ বার জি বি বাজার কমিটির সঙ্গে কথা বলি। তাদের সাহায্য চাই। তারা রাজি হয়ে যায়। আমার স্ত্রীও বাড়ি থেকে খাবার ও কিছু টাকাপয়সা দিত ওকে।

Advertisement

এর মধ্যে শাহজাহানকে আগরতলা মানসিক হাসপাতালে রেফার করা হয়। দিলীপ ও জ্যোৎস্না শাহজাহানের জন্য প্রতি শুক্র ও রবিবার সেখানে খাবার নিয়ে যেতেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতেও নিয়ে আসতেন। তেল মাখিয়ে স্নান করিয়ে দিতেন। দিলীপ বলেন, “ওর এক আত্মীয় বাংলাদেশ পুলিশে সিলেট জেলায় কর্মরত।তিনি আত্মীয় মারফত খবর পান। পাওয়া যায় শাহজাহানের বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর। দিলীপ-জ্যোৎস্নারা ভিডিয়ো কলে শাহজাহান ও তাঁর বাবা মানিক মিয়াঁর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতেন। কথা হত মায়ের সঙ্গেও। প্রায় দুই বছর ধরে চলছিল এমন। সঙ্গে চলতে থাকে শাহজাহানকে ফেরানোর চেষ্টা। কিন্তু মাঝে করোনার প্রকোপে দেরি হতে থাকে। শেষে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে যোগাযোগ করেন জ্যোৎস্নারা। স্থির হয় শাহজাহানের ঘরে ফেরার দিন।

বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হুসেন এ দিন বলেন, “আগরতলার মডার্ন সায়কায়াট্রিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা ছ’জন বাংলাদেশি নাগরিককে আজ সকালে তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।” তাঁদের ফেরত পাঠানোর সময় জিরো পয়েন্টে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার জোবায়েদ নিজে, প্রথম সচিব মহম্মদ রেজাউল হক চৌধুরী, প্রথম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান এবং আগরতলা আইসিপি-র আধিকারিকরা ও মনোরোগীদের হাসপাতালটির চিকিৎসক মণিকা দেববর্মা।

জ্যোৎস্না আজ ছেলেকে স্কুলে পাঠাননি। সপরিবার সীমান্তে এসেছিলেন শাহজাহানকে বিদায় জানাতে। রুমালে চোখ মুছে বললেন, “কষ্ট হচ্ছে।” একটু থমকে পরে যোগ করেন, “আসলে আজ কষ্ট ও আনন্দ দুই-ই হচ্ছে আমাদের।”

সীমান্তে দাঁড়িয়ে রজনীগন্ধা হাতে শাহজাহান বলে গিয়েছেন, “বাড়ি গিয়ে ফোন করব। যোগাযোগ রাখব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement