মাকে কোলে নিয়ে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে নারায়ণ দাস (ইনসেটে)। ছবি: মান্না দে
সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ঘিরে এখন অনেক প্রশংসা। অনেকে জানাচ্ছেন কুর্নিশ। দক্ষিণ মাছলির নারায়ণ দাস কিন্তু বললেন, ‘‘অতশত ভালমন্দ বুঝি না। ডাক্তার দেখাতে হবে, এটাই জরুরি ছিল। তাই মাকে কোলে তুলে রওনা হই। দু’কিলোমিটার হাঁটার পর গাড়ি পাই। গাড়ি থেকে নেমে মাকে কোলে নিয়েই যাই হাসপাতালের ভেতরে।’’ স্বাস্থ্যকর্মীরা অবশ্য ছুটে গিয়ে দ্রুত ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করেন। বছর ৫৫-র নারায়ণ বরং তাঁদেরই কুর্নিশ জানাচ্ছেন।
বরাকবাসী তাঁকে নিয়ে যতই গর্ব করুন, প্রেরণা খুঁজে পান তাঁর মধ্যে, নারায়ণের যুক্তি সাদাসিধে। ১০০ পেরনো মা অলঙ্গিনি দাসের হাঁটাচলা বন্ধ ৫ বছর ধরে। ডাক্তারেরা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর আর উঠে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। যত দিন বাঁচেন, এই ভাবেই কাটাবেন। তা বলে কি মায়ের ডাক্তার দেখানো হবে না! কিন্তু শ্রীগৌরীর কাছে দক্ষিণ মাছলি থেকে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে গাড়িতে রোগী আনা-নেওয়ায় প্রচুর খরচ। এত টাকা হাতে নেই। ট্রেনে চানা-মটর বেচে কত আর রোজগার হয়! তাই মাকে কোলে নিয়ে পথ হাঁটা ছাড়া অন্য কিছু ভাবনাতেই আসেনি।
বিরল ঘটনা না-হলেও বরাকের মানুষ মায়ের কোলে ছেলে দেখেই অভ্যস্ত। করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে বিপরীত ছবি দেখে কেউ মোবাইলে ছবি তুললেন। কেউ দৌড়ে দেখতে এলেন। আজকের দিনেও এমনটা ঘটে! নারায়ণের অবশ্য এ সবে ভ্রূক্ষেপ নেই। মাকে নিয়ে গিয়েছেন ডাক্তার দেখাতে। ৪-৫ দিন ধরে জ্বর। রাতে ঘুম হয় না। দ্রুত ওষুধ নিয়ে ফিরতে পারলে চানা-মটর নিয়ে বেরোবেন। ট্রেনের হকার তিনি। দারিদ্রের সঙ্গে লড়ে শৈশবে পড়াশোনা হয়নি বললেই চলে। তবু তাঁকেই প্রকৃত শিক্ষিত মনে করছেন অনেকে। আয়ুষ্মান ভারতের কর্মী মান্না দে বললেন, ‘‘অশিক্ষিত দরিদ্র মানুষটি আমাদের অনেক কিছু শেখালেন।’’
আরও পড়ুন: রাজ আমল থেকে বাঙালিরা ত্রিপুরার, প্রমাণ-সহ চিঠি শাহকে