গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
গৌতম আদানির কয়লাখনি প্রকল্পের বিরোধিতা করায় একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা (থিঙ্ক ট্যাঙ্ক), একটি ল’ফার্ম ও একটি পরিবেশকর্মী গোষ্ঠীকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি আমেরিকান সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর। সেপ্টেম্বরে ওই তিনটি সংস্থার দফতরে হানা দেয় আয়কর দফতর। বিষয়টি নিয়ে মোদী সরকার ও আদানি গোষ্ঠীর মুখপাত্র মুখ খুলতে রাজি হননি।
আমেরিকান সংবাদপত্রটির দাবি, ২০০৭ সালে ছত্তীসগঢ়ের হাসদেও আরান্ড জঙ্গলে কয়লাখনি চালানোর বরাত পায় আদানির নেতৃত্বাধীন একটি যৌথ উদ্যোগে চলা সংস্থা। ভারত সরকারের অনেক কমিটিই জানিয়েছিল, জঙ্গলটি কয়লাখনির পক্ষে পরিবেশগত ভাবে সংবেদনশীল। কিন্তু আদানি গোষ্ঠী ২০১৩ সালে খননের কাজ শুরু করে। প্রতিবাদ জানান স্থানীয় আদিবাসীরা। ‘লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ সংস্থার আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। স্থানীয় খনি-বিরোধী আন্দোলনকারী অলোক শুক্ল গ্রামবাসীদের এই আন্দোলনের জন্য সংগঠিত করার কাজ করছিলেন। আমেরিকান সংবাদপত্রটির দাবি, পরে মোদী সরকার অভিযোগ করে যে শুক্লকে আর্থিক মদত দিচ্ছে দিল্লির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ’। অন্য দিকে, পরিবেশকর্মী ই শ্রীধর ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের হাসদেও আরান্ডার গ্রামবাসীদের পরিস্থিতির কথা জানান। আমেরিকান সংবাদপত্রটির দাবি, পরিবেশকর্মী ও আন্দোলনকারীদের বিদেশ-যোগ নিয়েও ক্রুদ্ধ মোদী সরকার। তাতে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’-এর ছায়া দেখছে তারা। ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর দাবি, তাদের হাতে আসা সরকারি নথিপত্রেও প্রমাণ মিলেছে।
সেপ্টেম্বরে ‘সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ’, ‘লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ ও শ্রীধরের ‘এনভায়রনিকস’ সংস্থায় হানা দেয় আয়কর দফতর। ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর দাবি, হানার পরে ওই সংস্থাগুলির পরিচালক ও কর্মীদের ই-মেল, ফোন রেকর্ড পরীক্ষা করেন তদন্তকারীরা। পরে অভিযোগ করা হয়, শ্রীধরের সংস্থা মানবাধিকার সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’-এর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পায়। সেই অর্থ কয়লপ্রধান শিল্পের বিরুদ্ধে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে সংগঠিত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। হাসদেও খনি সম্পর্কে বিদেশি আন্দোলনকারীদের তথ্য দিয়ে শ্রীধর ভারত সরকারকে সমালোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সাহায্য করেছেন আদানি-বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার কাজে। ‘‘লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ঋত্বিক দত্তের বিরুদ্ধেও আমেরিকান সংগঠনের অর্থ নিয়ে কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অভিযোগ আনা হয়। হাসদেও খনির বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়ার অভিযোগ ওঠে ‘সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ’-এর বিরুদ্ধেও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রাজ কুমার ও আদানি গোষ্ঠীর মুখপাত্র এ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেননি বলে দাবি আমেরিকান সংবাদপত্রটির।