সমাজের সমস্ত প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে চুরমার করে মাত্র ২২ বছর বয়সে অ্যাম্বুল্যান্সের স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি। ন্যান্সি কাটনোরিয়া। তিনিই হিমাচল প্রদেশের প্রথম মহিলা অ্যাম্বুল্যান্স চালক। সারা ভারতে দ্বিতীয়।
হিমাচল প্রদেশের হামিরপুরের বাসিন্দা ন্যান্সি নুরপুর সিভিল হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাতে যোগ দেন। হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (এইচআরটিসি)-এর স্কুলে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ পান তিনি। হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে পেরে তাঁর অনেক দিনের ইচ্ছেপূরণ হয়েছিল বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ন্যান্সি।
ন্যান্সি যে অ্যাম্বুল্যান্স চালান, তা মূলত মহিলা, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং পুলিশের জন্য ২৪ ঘণ্টা জরুরি পরিষেবা প্রদান করে।
খুব অল্প বয়স থেকেই ন্যান্সির গাড়ি চালানোর শখ। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময়ই মোটরবাইক চালিয়ে ন্যান্সি সবাইকে চমকে দেন।
স্কুল শেষ করার পর ন্যান্সি গাড়ি চালানো শেখেন। বাবা-মাও তাঁকে স্বপ্নপূরণ করার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। ন্যান্সির বাবা খুব কম বয়সেই তাঁকে একটি মোটরবাইক উপহার দেন।
বাবা-মার সমর্থন পেলেও অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর জন্য আত্মীয়-পরিজন এবং প্রতিবেশীদের বাঁকা নজরে পড়তে হয়েছে ন্যান্সিকে। সে সবে দৃকপাত করেননি ন্যান্সি। অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তবে ন্যান্সি অ্যাম্বুল্যান্সেরও আগে হাতে তুলে নিয়েছিলেন বাসের স্টিয়ারিং। এইচআরটিসি-র হামিরপুর ডিপোর প্রথম মহিলা বাস চালক ছিলেন ন্যান্সি৷ বাস চালাতে চালাতে এইচআরটিসি-তে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। শুধু মাত্র কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে হিমাচলের একাধিক দুর্গম রাস্তায় বাস চালানোর দক্ষতা অর্জন করেন।
আত্মবিশ্বাসী ন্যান্সি এক প্রকার অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। এত দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল যে, বাস বা অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে পারে এক মাত্র পুরুষেরা। কিন্তু যে কতিপয় মহিলা সমাজের এই বদ্ধমূল ধারণা বদলে দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ন্যান্সি এক জন।
ন্যান্সি এক সাক্ষাৎকারে এমনও জানিয়েছিলেন যে, তিনি এক সঙ্গে একাধিক পেশায় যুক্ত থাকতে চান। নারীরা কোনও ক্ষেত্রেই পুরুষের থেকে পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এইচআরটিসি যখন ন্যান্সিদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন, তখন এই শিক্ষানবিশদের দলে ১৭ জন ছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে তিনিই এক মাত্র মহিলা ছিলেন। এইচআরটিসি-র প্রশিক্ষণে, গাড়ি চালানোর পাশাপাশি বাসের যান্ত্রিক দিক সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করেন ন্যান্সি।
ন্যান্সি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সেনা ট্রাক চালানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। বাণিজ্য নিয়ে স্নাতক পাশ করেছেন। বর্তমানে ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছেপূরণ করতে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ন্যান্সির আগে সিমলা ডিপোর সীমা ঠাকুর এইচআরটিসি-র প্রথম মহিলা বাসচালক হন। তিনি প্রথমে রাজ্যের মধ্যে বাস চালালেও দক্ষতা বাড়ার পর সিমলা-চণ্ডীগড় রুটে বাস চালাতে শুরু করেন।