ছবি: পিটিআই।
মধ্যপ্রদেশে সরকার ফেলার চেষ্টা ও রাজ্যসভার তিন আসনে ভোট নিয়ে নাটক নতুন মাত্রা পেল শনিবার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে বিজেপির বিধায়ক সঞ্জয় পাঠক জানালেন, তাঁর জীবন বিপন্ন। ২০ বছর ধরে তাঁর সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসে যোগ না-দিলে যে কোনও সময় অপহৃত বা খুন হয়ে যেতে পারেন। শাহ যেন তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। একই অভিযোগ এনেছেন বিজেপির আর এক বিধায়ক বিশ্বাস সারং। দাবি করেছেন, তাঁর উপর গোয়েন্দাগিরি করতেই রক্ষীদের সরানো হয়েছে। যেখানে যাচ্ছেন সাদা পোশাকে পুলিশ ঘিরে রাখছে। নিজের দফতরেও যেতে পারছেন না তিনি।
সঞ্জয়ের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাঁর বয়ানটি এই রকম: বৃহস্পতিবার রাতে ভোপাল বিমানবন্দর থেকে ফিরছিলাম। পথে কয়েকটি গাড়ি অনুসরণ করে। গাড়ি চালাচ্ছিল পুলিশ। অন্য লোকেরাও ছিল। অন্ধকার জায়গায় তারা আমাদের গাড়ি থামানোর চেষ্টা করে। আমার গাড়ির চালক কোনও মতে তাদের এড়িয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। ২০ বছর ধরে যাঁরা আমার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, সেই রক্ষীদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসে যোগ না দিলে আমাকে অপহরণ, এমনকি খুনও করা হতে পারে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে মাত্র চার জন বেশি বিধায়ক নিয়ে টিকে আছে কমল নাথের সরকার। তাদের চার জন নিখোঁজ হওয়ায় সঙ্কটে পড়েন কমল। মুখে যদিও বলেছেন, সামলে নেওয়া গিয়েছে সঙ্কট। কী ভাবে? তা বলেননি। নিখোঁজ হয়ে থাকা চার বিধায়কের এক জন আজ ফিরে এসেছেন ভোপালে। নির্দল বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ শেরা ফিরে এসে আনুগত্য জানিয়েছেন কমল নাথের প্রতি।
আরও পড়ুন: ‘ব্রাহ্মণদের’ জন্য শৌচাগার!
কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কি কোনও কথা হয়েছে সঞ্জয়ের? এই প্রশ্নে বিজেপির ওই বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী জানান, সামনাসামনি বা ফোনেও কমল নাথের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। তবে কাটনি জেলার রাজনীতিক এই খনি-ব্যারন যে বেশ চাপে রয়েছেন তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে হালে।
গত বুধবার সঞ্জয়ের একটি খনি বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছে কমল সরকার। উমারিয়া জেলায় সঞ্জয়ের পরিবারের রিসর্টের একাংশ আজ সকালে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এটি রুটিন কাজ। নোটিস দেওয়া হয়েছিল। জমি জবরদখল করে সাইনা রিসর্টের ওই অংশ তৈরি করা হয়েছিল। সেই অভিযোগ খণ্ডন না-করে সঞ্জয় পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই জঘন্য কাজ করা হয়েছে।’’ একই অভিযোগ এনেছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র পঙ্কজ চতুর্বেদীর বক্তব্য, ‘‘যা হয়েছে নিয়ম মেনেই হয়েছে।’’
সঞ্জয় পাঠক ও বিশ্বাস সারং— এই দু’জনেই রাজ্যে সরকার ফেলার চক্রান্তে বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের সাংসদ দিগ্বিজয় সিংহের। যদিও কংগ্রেসেরই অন্দরে অনেকে বলছেন, নিজেই কমল সরকারকে সঙ্কটে ফেলে ত্রাতার ভূমিকায় নেমেছেন তিনি। যাতে ফের রাজ্যসভার ভোটে জিতে ফিরতে পারেন। কমল-বিরোধী শিবিরের মুখ জ্যতিরাদিত্য সিন্ধিয়া গোটা পর্বে মুখ কুলুপ এঁটে রয়েছেন।