প্রতীকী চিত্র।
অপহরণকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল ১৬ বছরের এক কিশোরীকে। সেই থানা থেকেই ফের অপহরণ করে তাকে কয়েকদিন ধরে ধর্ষণ করে একাধিক ব্যক্তি। উত্তরপ্রদেশের এই ঘটনা সামনে এসেছে বুধবার। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সমাজ ও মহিলা অধিকার আন্দোলনকর্মীরা।
কিশোরীর বাড়ির লোক জানিয়েছেন, ১৪ অগস্ট সে প্রথমবারের জন্য নিখোঁজ হয়। সেই ঘটনার তিন দিন পর বাড়ির কাছেই একটি গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণকারীদের ধরতে পারেনি পুলিশ। এর পর কিশোরীর মেডিক্যাল পরীক্ষাও করানো হয়। ২১ অগস্ট ওই নির্যাতিতার বয়ান নথিভুক্ত করানোর জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
সেখানে যাওয়ার আগেই এটাওয়া-র আওয়াগড় থানার পুলিশি হেফাজত থেকে ফের অপহরণ করা হয় তাকে। পুলিশের দাবি, যারা আগের বার অপহরণ করেছিল তারাই ফের থানা থেকে অপহরণ করে। কিশোরীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মহিলা কনস্টেবলকে বাথরুমে তালা বন্দি করে কিশোরীকে দ্বিতীয়বারের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঘটনার তদন্তকারী অফিসার।
এর পর কিশোরীর খোঁজে তল্লাসি শুরু করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল ‘সোয়াট’। ২৭ অগস্ট গুরুগ্রামের দু’কামরার একটি ঘর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময় নির্যাতিতা জানিয়েছে, ওই সময়কালে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে এবং একাধিক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেছিল।
প্রথম বার অপহরণের পর মেয়েটির পরিবারে লোক অপহরণের জন্য লবকুশ নামের ২০ বছরের এক যুবককে দায়ী করেন। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, লবকুশ নামের ওই যুবক ওই কিশোরীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সে।
আরও পড়ুন: এক দিনে আক্রান্ত ৯৫ হাজার! নতুন সংক্রমণে ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে দিল্লি
কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে ১২ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শেষ হলেই চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। সেখানকার পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রাহুল কুমার বলেছেন, ‘‘ঘটনার মূল অভিযুক্ত ২০ বছরের লবকুশ। সে আগে গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (খুনের জন্য অপহরণ)-সহ একাধিক ধারা ও পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। থানা থেকে নাবালিকার অপরহণের তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশি হেফাজত থেকে অপহৃত হওয়ার পরই ওই থানার স্টেশন হাউস অফিসার, তদন্তকারী অফিসার ও এক মহিলা কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
অপহরণের পর উদ্ধার ও ফের অপহরণ—এই ঘটনা পরম্পরায় পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। শিশু অধিকার আন্দোলনকর্মীদের মতে, নাবালিকাকে কখনই থানায় নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই অপহরণের পর উদ্ধার করে থানায় নিয়ে নাবালিকাকে রেখে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে পুলিশ। আইন বলছে, নাবালিকাকে উদ্ধারের পর নিপীড়িত মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় (আশা জ্যোতি কেন্দ্র) নিয়ে যেতে হয়। সেখানে কাউন্সেলিংয়ের পর শিশু কল্যাণ কমিটির সামনে পেশ করা হয়। তাই নাবালিকা অপহরণ ও ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলি ঠিক মতো মোকাবিলার জন্য পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: উৎসব-মেলায় রমরমা, ১৬৫ গ্রামে রিয়া জেলে