—প্রতীকী ছবি।
গনগনে আগুনের ভিতরে মোটা একটা রুপোর বালা। লাল, দগদগ করছে। নিতান্তই নির্বিশেষ, বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের কব্জিতে আকছার দেখা যায় রাজস্থানে। চোদ্দো বছরের নিখোঁজ বালিকার সন্ধানে জঙ্গলে গিয়ে কাঠকয়লার ভাটিতে সেটা নজরে এসেছিল গ্রামের মানুষজনের। পাশে হাড়ের কিছু টুকরো, তখনও যেটুকু ছাই হতে বাকি।
বুধবার রাতে ভীলওয়াড়া শহরের কাছে একটি জঙ্গলের ভিতরের ওই ঘটনার আঁচ আজ সকাল থেকে ভোটমুখী রাজস্থান ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। ওই বালিকাকে গণধর্ষণ করে প্রমাণ লোপাটের জন্য জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যাযাবর জনগোষ্ঠীর কয়েক জনকে গ্রামের মানুষজনই পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, মোট পাঁচ জন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অশোক গহলৌতের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ ছাগল চরাতে গিয়েছিল ওই বালিকা। দুপুর ৩টে নাগাদ ছাগলগুলি ফিরে আসে, কিন্তু সে আর ফেরেনি। অভিযোগ, থানায় গেলে আগে তার পরিচয়পত্র আর জন্মের শংসাপত্র নিয়ে আসতে বলে বাড়ির লোকজনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অগত্যা স্থানীয় মানুষজন খোঁজ শুরু করেন। সর্বত্র তোলপাড় করে রাতে ফের এক বার জঙ্গলে ঢোকেন তাঁরা। জঙ্গলের ভিতরে কয়েকটি ভাটি, যাযাবর জনগোষ্ঠীর লোকজন কাঠকয়লা তৈরি করেন। দেখা যায়, একটি জ্বলছে। পুরোটা ঢাকাও হয়নি। কাছে গিয়ে প্রথমে মেলে এক পাটি চটি। তার পরে চুল্লির ভিতরে দগ্ধ হাড়।
খবর পেয়ে ফরেন্সিক দল নিয়ে পুলিশ যায়। দগ্ধ দেহাবশেষ ওই বালিকার কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষার তোড়জোড় হচ্ছে। গ্রামের মানুষজনের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক সময়ে আশপাশের অঞ্চল থেকে নিখোঁজ আরও মেয়ের দেহ ওই ভাটিতেই পোড়ানো হয়ে থাকতে পারে। আজ সকাল থেকেই মেয়েটির বাড়িতে নানা দলের নেতা-মন্ত্রীদের আনাগোনা। সংবাদমাধ্যমের ভিড়। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সমান্তরাল কমিটি গড়েছে বিজেপিও।
মণিপুর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজস্থানের নাম উল্লেখ করা নিয়ে মঙ্গলবার তোপ দেগেছিলেন গহলৌত। আজ নারী সুরক্ষার প্রশ্নে ব্যর্থতার দায় নিয়ে গহলৌতের পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত গত বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে উল্লেখ করেন, ধর্ষণের মামলায় দেশে শীর্ষস্থানে রাজস্থান। রাজ্যে রোজ গড়ে ১৭টি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের নজির টেনে কংগ্রেস পাল্টা বলছে, নাবালিকা ধর্ষণের মামলা সেখানেই সর্বোচ্চ।
আরও একটি মামলা। রাজনৈতিক আকচাআকচির মধ্যে পুলিশের খাতায় লেখা হল একটি রুপোর বালার কথা, ছোট্ট হাতের মাপে, শরীর ছাই হওয়ার পরেও যা একই রকম কঠিন।