ছত্তীসগঢ়ের বন্ধ্যাকরণ শিবিরে অস্ত্রোপচারের পরে মৃত্যুর ক্ষত এখনও টাটকা। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩। তার মধ্যেই রবিবারের আরও দু’টি সরকারি শিবিরে একই অস্ত্রোপচারে অসুস্থ হয়ে পড়লেন আরও ১৬ জন মহিলা। ঘটনাস্থল সেই ছত্তীসগঢ়। বিলাসপুরের কাছে পেন্দ্রা ও মারওয়াহি গ্রাম। অসুস্থ হয়ে পড়া মহিলারা বিলাসপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
বিলাসপুরের জেলা কালেক্টর সিদ্ধার্থকোমল পরদেশি আজ জানান হাসপাতালগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরে যে ওষুধগুলি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পরপর দু’দিন এমন ঘটনায় রমন সিংহ সরকারের কাছে দশ দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে ছত্তীসগঢ় হাইকোর্ট। সালিম কাজিয়া ও সুনীতা জৈন নামের দু’জন আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁদের কাছে ঘটনার তদন্ত-সংক্রান্ত দৈনিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। দু’সপ্তাহের মধ্যে ঘটনার রিপোর্ট তলব করে ছত্তীসগঢ় সরকারকে নোটিস দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।
ঘটনাচক্রে, সাসপেন্ড হওয়া চার চিকিত্সকের মধ্যে থেকে এক জন রয়েছেন সরকারের তদন্তকারী দলেও। কে সি উরাও নামের ওই চিকিত্সকই আজ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের পরে ব্যথা কমানোর জন্য ব্রুফেন ও অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে সিপ্রোফ্লক্সিন ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলির মধ্যেই কোনও ত্রুটি ছিল বলে তাঁর দাবি। রাজ্য সরকারের তিন সদস্যের কমিটিও জানিয়েছে, অস্ত্রোপচারের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী জটিলতা এই মৃত্যু-বিপর্যয়ের কারণ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। এইমসের সাত চিকিত্সকের একটি দল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আজ জানান, সম্পূর্ণ রিপোর্ট না পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
শনিবারের শিবিরের মুখ্য শল্য চিকিত্সক আর কে গুপ্তর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে গত কালই। সরকারি সূত্রের খবর, এক লক্ষেরও বেশি সফল বন্ধ্যাকরণ অস্ত্রোপচার করার জন্য চলতি বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে পুরস্কৃত হন ৫৯ বছরের ওই চিকিত্সক।
শনিবারের শিবিরের পর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, মাত্র এক জন সহকারী নিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় ৮৩ জনের অস্ত্রোপচার করেন তিনি। বিলাসপুরের ওই হাসপাতালে এক দিনে অতগুলি অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামোও নেই বলে জানা গিয়েছে।
অভিযোগ, বিছানার অভাবে মাটিতেই অনেকের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। ছিল না পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও। আর তাতেই সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। একটি সূত্রের খবর, পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্পে প্রতি বছর বন্ধ্যাকরণের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। সময় পেরোনোর আগে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এ ভাবেই শিবির করে বন্ধ্যাকরণ করানো হয় সরকারি উদ্যোগে। আর এই তাড়াহুড়োর কারণেই অবহেলিত থেকে যায় সুরক্ষার বিষয়টি।