টিকাকরণের সপ্তম দিনে সাড়ে ৩ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র ৬ দিনেই দেশ জুড়ে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের কোভিড টিকাকরণ হয়েছে। ব্রিটেন বা আমেরিকার থেকেও দ্রুত গতিতে এ দেশে গণ-টিকাকরণ হচ্ছে। রবিবার এমন দাবি করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, ১৬ জানুয়ারিতে দেশে গণ-টিকাকরণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ২৭ হাজার ৯২০টি সেশনে ১৫ লক্ষ ৮২ হাজার জনকে কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র শনিবারই ৩ হাজার ৫১২টি সেশনে ১ লক্ষ ৯১ হাজারের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রক জানিয়েছে, ব্রিটেনে ১৮ দিনে এবং আমেরিকায় ১০ দিনে ১০ লক্ষের টিকাকরণ করা হয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ভারত।
দেশে গণ-টিকাকরণের শুরু হওয়ার পরও বহু মানুষ তা নিতে ইচ্ছুক নন বলে জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। টিকা নেওয়ার পর মৃত্যু হয়েছে ৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীর। পাশাপাশি, ১ হাজার ২৩৮ জনের মধ্যে বিরূপ শারীরিক প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে টিকা নেওয়ার পর ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। তবে টিকাকরণে উৎসাহ দিতে টুইটারে হর্ষ বর্ধনের আর্জি, ‘গুজবে কান দেবেন না। বরং টিকাকরণের তথ্য সম্পর্কে অবহিত হন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। নির্দিষ্ট সময়ে কোভিড টিকা নিন’।
কোভিড টিকা নেওয়ার পর যাঁরা অসুস্থ হয়েছেন, সেই সংখ্যাটা অত্যন্ত নগণ্য বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গণ-টিকাকরণের পর এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র ০.০৮ শতাংশ অসুস্থ হয়েছেন। টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যু প্রসঙ্গে মন্ত্রকের দাবি, এর সঙ্গে কোভিড টিকার কোনও সম্পর্ক নেই।
গত সপ্তাহে দেশ জুড়ে গণ-টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে তা নিয়ে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম সপ্তাহের পর থেকে টিকা নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন বহু স্বাস্থ্যকর্মী। টিকাকরণের সপ্তম দিনে সাড়ে ৩ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। কো-উইন অ্যাপে রদবদল করার ফলেই এই সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, কো-উইন অ্যাপে রদবদলের পর এখন থেকে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেও টিকা নিতে পারছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। দিল্লির এক মাইক্রোবায়োলজিস্ট রেণু গুপ্ত কো-উইন অ্যাপের মাধ্যমে টিকাকরণের নথিভুক্তি করিয়েছিলেন। তবে তাঁর কাছে সেই সূচির এসএমএস পৌঁছয়নি। এর পর রেণু নিজেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে কোভিড টিকা নিয়েছেন। তিনি বলেন, “টিকা নেওয়ার দিনক্ষণ জানিয়ে কো-উইন অ্যাপে যে এসএমএস আসে, তা পাইনি। হয়তো আমার কাছে তা পৌঁছতে আরও ৪-৫ দিন লাগত। তবে ভাবলাম, এই সুযোগে যত দ্রুত টিকা নেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। তাই টিকা নিতে নিজেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়েছিলাম।” রেণুর মতে, “কোভিডের থেকে অন্যদের সুরক্ষিত রাখার জন্য টিকার মাধ্যমে নিজেদের রক্ষা করা উচিত। এ কারণেই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রথম দিকে টিকাকরণ হচ্ছে।”
স্বাস্থ্যকর্মীদের যে টিকা নেওয়া জরুরি, তা মনে করেন নিউরো ফিজিওথেরাপিস্ট শুভম। তাঁর কথায়, “আমি সবেমাত্র টিকা নিয়েছি। সব স্বাস্থ্যকর্মীর টিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে বলব। এটা আমাদের কর্তব্য এবং পেশাদারি দায়িত্বও বটে। আমরা নিজেরাই টিকা না নিলে, সাধারণ মানুষদের কাছে কী বার্তা দেব?”