ঋষি শৌনক মহামতি সূতকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে সূত, অন্যান্য দেবতাদের উপাসনার চেয়ে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনাই শ্রেষ্ঠ বলে জানি। আরও শুনেছি, তার চেয়েও রাধারানির আরাধনা অধিকতর পুণ্যপ্রদ ও শেষ্ঠ। অতএব শ্রী রাধার অর্চনা বিষয়ে কোনও ব্রতাদির কথা বলুন।
সূত বললেন, হে ঋষিবর! আমি একটি গোপনীয় ব্রতের কথা বলছি শুনুন।
একদিন দেবর্ষি নারদ শ্রীকৃষ্ণের নিকটে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ভগবান! আপনার শ্রীমুখে অনেক ব্রতের কথা শুনেছি। এখন শ্রীমতি রাধিকার জন্মদিনের ব্রতকথা শুনতে ইচ্ছা করি।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, দেবর্ষি! তুমি আমার পরম ভক্ত। সে জন্য তোমার কাছে বলছি, শ্রবণ কর।
কোনও এক সময় সূর্যদেব ত্রিলোক ভ্রমণ করতে করতে নানা প্রকার ঐশ্বর্য্য দেখে মনে মনে তপস্যার সঙ্কল্প করে, মন্দার পর্বতের গুহায় কঠোর তপস্যা আরম্ভ করলেন। এই ভাবে দীর্ঘ দিন গত হলো। সূর্যের কঠোর তপস্যা আর পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় দেবতারা ভীত হলেন। ইন্দ্র দেবগণ-সহ আমার কাছে এসে সব কথা বলে। আমি বললাম, হে দেবগণ। সূর্য থেকে তোমাদের কোনও ভয় নাই। তোমরা নিজ নিজ স্থানে যাও। আমি সূর্যদেবকে তপস্যা থেকে নিরস্ত করব।
আরও পড়ুন: জানেন দেবতাদের মধ্যে সবার আগে গণেশের পুজো কেন করা হয়?
তারপর আমি সূর্যের কাছে গেলাম। সূর্য আমাকে দেখে খুব আনন্দিত হলেন। তিনি বললেন, হে শ্রীহরি! আপনার দর্শন পেয়ে আমার জন্ম ও তপস্যা সার্থক হল। যিনি সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার কর্তা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর যাঁকে সব সময় চিন্তা করেন, তাঁকে দর্শন করে আমি ধন্য হলাম।
আমি সন্তুষ্ট হয়ে সূর্যকে বললাম, হে দিবাকর! তুমি তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেছ। এখন বর প্রার্থনা কর। তুমি আমার পরম ভক্ত, সে জন্যই তোমাকে আমি দর্শন দিলাম। এই কথা শুনে সূর্য বললেন, হে প্রভু! আমাকে একটি গুণবতী কন্যার বর দিন। আপনি চির দিন সেই কন্যাটির বশীভূত থাকবেন। এ ছাড়া আমার আর কোনও ইচ্ছা নেই।
আমি তথাস্তু বলে তাঁকে বললাম, এই ত্রিলোকে আমি একমাত্র শ্রীরাধিকারই বশীভূত। শ্রীরাধা এবং আমাতে কোনও প্রভেদ নাই। আমি পৃথিবীর ভার লাঘবের জন্য বৃন্দাবনে নন্দালয়ে অবতীর্ণ হব। তুমিও সেখানে বৃষভানু নামে রাজা হয়ে জন্মগ্রহণ করবে। শ্রীরাধা তোমার কন্যারূপে অবতীর্ণ হবেন।
তারপর শ্রীহরি মথুরায় জন্মগ্রহণ করে নন্দালয়ে এলেন। সূর্যদেব বৈশ্যকুলে জন্মগ্রহণ করে বৃষভানু হলেন। গোপকন্যা কীর্তিদার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হল। যথা সময়ে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে বিশাখা নক্ষত্রে কীর্তিদার গর্ভে রাধিকা জন্মগ্রহণ করলেন। গোপ-গোপীরা আনন্দোৎসবে মেতে উঠল। আমার মায়ায় মুগ্ধ হয়ে রাধিকা আমাকেই পতিত্বে বরণ করতে ইচ্ছা করলেন।
যথাকালে আয়ান ঘোষের সঙ্গে শ্রীরাধার বিবাহ হল বটে, কিন্তু আমাকে পরম পুরুষজ্ঞানে আমার সঙ্গে বিহার করতে লাগলেন।
শ্রীরাধার এই জন্ম তিথিতে গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ও বসন-ভূষণ দ্বারা শ্রীরাধার পূজা করে, নানা প্রকার মহোৎসব, ক্রীড়া, কৌতুকাদি করতে হয়। রাধার সখীবৃন্দ, গোপিকাবৃন্দ, কীর্তিদা, বৃষভানু, প্রভৃতিরও পূজা করতে হয়। তার পর ব্রতকথা শুনে সে দিন উপবাসী থেকে পর দিন বৈষ্ণবদের সঙ্গে প্রার্থনা করতে হয়। রাধা নামের সঙ্গে কৃষ্ণ নাম যুক্ত করে জপ করলে যাবতীয় মন্ত্র জপের ফল লাভ হয়। তপ-জপে আমার যেমন সন্তোষ জন্মে, এক বার রাধানাম উচ্চারণ করলে তার চেয়ে সহস্রগুণ বেশি আমি সন্তোষ লাভ করি।
আরও পড়ুন: রাশি অনুযায়ী আপনার প্রাপ্তিযোগ, বাধা ও তার প্রতিকার (চতুর্থ পর্ব)
এই ব্রতের অনুষ্ঠানে সব দুঃখ দূর হয় ও পরম শান্তি লাভ হয়। ধনৈশ্বর্যে গৃহ পূর্ণ হয় এবং সর্বস্থানে বিজয় লাভ হয়। ভক্তের কাছে এই ব্রতের কথা বললে সমস্ত অমঙ্গল দূর হয়। কিন্তু ভণ্ড,পাষণ্ড, ভক্তিহীন নাস্তিকের কাছে প্রকাশ করলে অমঙ্গল হয়। শ্রীকৃষ্ণের কাছে এই কথা শুনে নারদ মর্তে এই ব্রত প্রচার করলেন আর নিজেও ব্রতপালন করলেন।
আসুন এখন জেনে নেওয়া যাক ১৪২৬ সনের রাধাষ্টমীর দিনক্ষণ:
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
অষ্টমী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ১৯ ভাদ্র ১৪২৬, বৃহস্পতিবার।
ইং তারিখ: ০৫/০৯/২০১৯।
সময়: রাত ০৮টা ৫০ মিনিট থেকে।
অষ্টমী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ: ২০ ভাদ্র ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ০৬/০৯/২০১৯।
সময়: রাত্রি ০৮টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত।
শ্রীশ্রীরাধাষ্টমী ব্রত:
বাংলা তারিখ: ২০ ভাদ্র ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ০৬/০৯/২০১৯।
সময়: রাত্রি ০৮টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত।
রাধাষ্টমী ব্রতের পারণ:
বাংলা তারিখ: ২১ ভাদ্র ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ০৭/০৯/২০১৯।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
অষ্টমী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ১৮ ভাদ্র ১৪২৬, বৃহস্পতিবার।
ইং তারিখ: ০৫/০৯/২০১৯।
সময়: রাত ০২টো ১৪ মিনিট থেকে।
অষ্টমী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ: ১৯ ভাদ্র ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ০৬/০৯/২০১৯।
সময়: রাত্রি ০১টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত।
শ্রীশ্রীরাধাষ্টমী ব্রত:
বাংলা তারিখ: ১৯ ভাদ্র ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ০৬/০৯/২০১৯।
সময়: রাত্রি ০১টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত।
রাধাষ্টমী ব্রতের পারণ:
বাংলা তারিখ: ২০ ভাদ্র ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ০৭/০৯/২০১৯।