রূপভেদে ‘প্রধান’ ও ‘অঙ্গ’ এই দুই প্রকার তর্পণ রয়েছে। প্রধান তর্পণ হল প্রতি দিনের সন্ধ্যাহ্নিকের মতো পিতৃযজ্ঞস্বরূপ তর্পণবিধি। আর অঙ্গ-তর্পণ হল স্নানাদিকর্মে যে তর্পণ করা হয়। স্নান তিন প্রকার হওয়ায় তর্পণও তিন প্রকার। এখানে মনে রাখা দরকার যে, স্নানাঙ্গ তর্পণ করলে নিত্য তর্পণ করার প্রয়োজন হয় না। তবে একই দিনে বহু তীর্থ স্নান কিংবা গ্রহণাদির জন্য বারবার স্নান করলে প্রতি স্নানেই তর্পণ আবশ্যক।
এখন দেখে নেওয়া যাক কী ভাবে আপনি তর্পণ করবেন—
স্নানান্তেই করতে হয় স্নানাঙ্গ তর্পণ। বৃষ্টির জল মিশে গিয়েছে এমন জলে তর্পণ করতে নেই। এ জন্য নদী বা পুষ্করিণীতে তর্পণকালে বৃষ্টি হলে ছাতা ব্যবহার করা উচিত। বামহাতের লোমশূন্য স্থানে বস্ত্রের ওপর তিল রেখে ডান হাতের অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দিয়ে কিংবা কেবল অঙ্গুষ্ঠ বা তর্জনী দিয়ে তিল গ্রহণ করতে হয়। পরিধেয় বস্ত্রে তিল রাখতে নেই। বাম হাতে মাটি লেপে তার ওপর তিল রাখা যায়। কোশা-কুশি আট আঙুলের কম না হয়। বাম ও ডান হাতের অনামিকায় কুশের অঙ্গুরি পরতে হয়। পারলে ডান হাতের তর্জনীতে সোনা কিংবা রুপোর আংটি।
তর্পণের শুরুতে ব্রাহ্মণগণ ‘ওঁ’ ও অন্যান্যরা ‘নমঃ’ বলে শুরু করবেন। স্নানান্তে তিলক ধারণ কাম্য। সামবেদীয়, ঋগ্বেদীয় ও যজুর্বেদ অনুসারে তর্পণকাল আলাদা। বর্ণভেদে তর্পণও নানা রকম। দেব তর্পণ, মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্য-পিতৃতর্পণ, যম তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ, পিতৃ তর্পণ, রাম তর্পণ, লক্ষণ তর্পণ ইত্যাদি।
মন্ত্রাদি সহযোগে তর্পণ হচ্ছে প্রকৃত অর্থেই পিতৃপুরুষগণের তৃপ্তি বিধান। পিতা তৃপ্ত হলে সকল দেবতাই তৃপ্ত হন।
বিঃ দ্রঃ- কারা তর্পণ করতে পারবেন না তা শাস্ত্র নির্দিষ্ট। যে সব ব্যক্তির পিতা জীবিত আছেন তারা এবং স্ত্রীলোকেরা তর্পণ করতে পারবেন না। অবশ্য বিধবারা তর্পণ করতে পারেন যদি তাদের পু্ত্র-পৌত্রাদি না থাকে। তারা স্বামী, শ্বশুর এবং শ্বশুরের পিতার তর্পণ করতে পারেন।