পঞ্জিকা বলছে, এ বার মা আসছেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চেপে। দশমীর দিন তিনি ফিরেও যাচ্ছেন ঘোড়ায় চেপে। অর্থাৎ এই বছরে দেবীর আগমন ও গমন ঘোটকে। পণ্ডিতরা বলছেন, ঘোড়ায় আগমন ও গমন মোটেই শুভ নয়। ঘোড়া ছটফটে প্রাণী। সে যখন যায়, সব কিছু ছত্রভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দেবীর ঘোটকে আগমন ও গমনে প্রমাদ গুনছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। এতে ফসল নষ্ট হওয়ার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা ও খরা হতে পারে। দেখা দিতে পারে মহামারী ও রাজনৈতিক অস্থিরতা।
কী ভাবে দেবীর বাহন প্রতি বছর বেছে নেওয়া হয়, জানেন? অর্থাৎ তিনি কিসে চেপে আসবেন ও যাবেন, সেটা জানার জন্য একটা মজার অঙ্ক আছে। মজার ব্যাপার হল দেবী দুর্গা সিংহবাহনী৷ তা হলে ঘোড়ায় আগমন, দোলায় গমন, গজে গমনের মতো প্রশ্নগুলি আসে কী করে! বিষয়টি বেশ মজার৷
জেনে নেওয়া যাক দেবীর আগমন ও গমনের বার ও বাহন অনুযায়ী ফলাফল:
আরও পড়ুন: বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে ১৪২৬ সনের মহালয়া এবং দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি
শ্রাস্ত্র আছে, দেবীর গমনাগমন যদি রবিবার বা সোমবার হয়, তা হলে তাঁর বাহন হয় গজ৷ আবার দেবীর গমনাগমন শনিবার বা মঙ্গলবার হলে তিনি চড়েন ঘোটকে৷ কিন্তু, বৄহস্পতিবার বা শুক্রবার যদি দেবীর গমনাগমন হয়, তা হলে তিনি দোলায় যাতায়াত করেন৷ আর বুধবার হলে তাঁর যাতায়াতের যানবাহন হয় নৌকা৷
দেবী যদি গজে গমনাগমন করেন, তা হলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং ফলন ভাল হয়৷ সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকে মর্ত্যভূমি৷
হাতি হল অন্নপূর্ণা এবং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার বাহন৷ অন্নপূর্ণার আশীর্বাদে শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে বসুন্ধরা। বিশ্বকর্মার বাহন যেমন গজ, তেমনই বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা৷ তাই গজে গমনাগমনের ফলে পৃথিবীতে কৃষিকাজের পাশাপাশি শিল্পের উন্নতি ও প্রসার হয়৷
দেবী দুর্গা যদি দোলায় চড়ে গমনাগমন করেন, তার ফল মর্ত্যে বহু মৃত্যু৷ এই বহু মৃত্যু হতে পারে প্রাকৄতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা যুদ্ধ হানাহানির কারণে।
দোলা হল পালকির মতো একটি যান ৷ যার স্থিরতা কম, সদা দোদুল্যমান, অল্পে ভঙ্গুর এবং অনেক সময়ই বিপদের কারণ৷ তাই দুর্গার দোলায় গমনাগমনে মর্ত্যভূমির স্থিরতা ব্যাহত হতেই পারে।
আরও পড়ুন: গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি
দেবী দুর্গার গমনাগমন ঘোটকে হলে চরম বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষয়ক্ষতি দেখা দেয়৷ ঘোটক অত্যন্ত ক্ষিপ্রগামী, বুদ্ধিমান এবং প্রভুভক্ত৷ তবুও কখনও কখনও তার আচরণে উদভ্রান্ত ভাব লক্ষ্য করা যায়৷ এমন সময় ঘোড়া ছুটতে থাকে লক্ষ্মীর বিপরীতে৷
ঘোড়ার এমন স্বভাবের প্রভাবই মর্ত্যের উপর পড়ে, যখন দুর্গা গমনাগমন করেন ঘোটকে৷ এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে দেবী ঘোটকে গমনাগমন করেন মঙ্গলবার বা শনিবার৷ মঙ্গল গ্রহের সেনাপতি, তেজস্বী ও বীরদর্পী৷ আর শনি হল কূট বুদ্ধি সম্পন্ন, প্রায়শই অনিষ্টকারী৷
দেবী দুর্গা নৌকায় গমনাগমন করলে মর্ত্যভূমিতে শস্য খুব ভালো হয়ে থাকে৷ কিন্তু, অতি বৄষ্টি বা বন্যার আশঙ্কাও থাকে৷ এক কথায়-জল বৄদ্ধির প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে মর্ত্যভূমিতে।
দুর্গা বুধবার যাতায়াত করলেই তার যানবাহন হয় নৌকা৷ বুধবার হল সৌম্যবার৷ খুব শান্ত সৌম্য, শান্তিপ্রিয় হলেও বালক স্বভাবের৷ তাই বুধ সরল কিন্তু চঞ্চল মানসিকতা সম্পন্ন৷ দুর্গা বুধবার যাতায়াত করলেই তার যানবাহন হয় নৌকা৷ বুধবার হল সৌম্যবার৷ খুব শান্ত সৌম্য, শান্তিপ্রিয় হলেও বালক স্বভাবের। তাই বুধ সরল কিন্তু চঞ্চল মানসিকতা সম্পন্ন৷
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবছর (১৪২৬ সন) দেবী আসছেন ঘোড়ায়। পঞ্জিকা মতে এর ফল ‘ছত্রভঙ্গ’। দশমীর দিন এবার মা দূর্গার গমন হচ্ছে ঘোড়ায়। পঞ্জিকা অনুযায়ী এভাবে গমনের ফল ‘ছত্রভঙ্গ’।