Typhoid Fever Symptoms

জ্বর বেড়েই চলেছে, পেটখারাপ, জন্ডিসের লক্ষণ, টাইফয়েড নয় তো? চিকিৎসা ও পথ্য বলছেন চিকিৎসক

টাইফয়েডের লক্ষণ চট করে বোঝা যায় না। জ্বর, পেটখারাপ নিয়ে অনেক রোগীই চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, আর পরে ধরা পড়ছে টাইফয়েড। এই রোগ হলে কী কী নিয়ম মানতে হবে, জেনে রাখা ভাল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ১৩:০৩
Share:

টাইফয়েড রোগের লক্ষণ কী কী, জেনে রাখুন। ছবি: ফ্রিপিক।

বর্ষা এলেই এই রোগের উপদ্রব বাড়ে। এখন ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে যতটা না সতর্ক থাকতে হবে, তার চেয়েও বেশি সতর্কতা দরকার জলবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে। তার মধ্যেই একটি হল টাইফয়েড। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণজনিত টাইফয়েড ধরা পড়ছে অনেকেরই। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “জ্বর, পেটখারাপ, গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা নিয়ে অনেক রোগীই আসছেন। অনেকের জন্ডিসের লক্ষণও দেখা দিচ্ছে। পরে পরীক্ষা করে ধরা পড়ছে টাইফয়েড। ১০ থেকে ১৫ দিন অবধি অসুস্থ থাকছেন রোগী।”

Advertisement

টাইফয়েড চট করে বোঝার উপায় নেই। সালমোনেল্লা টাইফি নামে এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণেই এই রোগ হয়। চিকিৎসকের মতে, রাস্তার খোলা খাবার, কাটা ফল, কাঁচা স্যালাড বেশি খেলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া দূষিত জল থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। রাস্তা থেকে কিনে কাটা ফল খেলে বা ফলের শরবত খেলে, তার থেকেও রোগ ছড়াতে পারে। প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক মানুষই নোংরা, পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ের জল ব্যবহার করেন। বাসন মাজা, কাপড় কাচা, গৃহপালিত পশুদের স্নান করানোর জন্য সেই জল ব্যবহার করা হয়। এমনকি, পানীয় জল হিসেবেও সেই নোংরা জলের ব্যবহার হয়। এর থেকেই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তের মলমূত্র থেকে টাইফয়েডের ব্যাক্টেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

টাইফয়েডের ‘সাইলেন্ট ক্যারিয়ার’ হন অনেকে, জানালেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। সেটা কী? চিকিৎসকের কথায়, টাইফয়েডের ব্যাক্টেরিয়া শরীরে ঢুকলেও সংক্রমিত হন না অনেকে। তবে তাঁরা সেই ব্যাক্টেরিয়ার বাহক হন। তাঁদের থেকেই রোগ অন্যদের শরীরে ঢুকতে পারে। যেমন, টাইফয়েডের জীবাণু কারও শরীরে ঢুকেছে আর তিনি যে জল খাচ্ছেন বা যে থালায় খাচ্ছেন, তাতে অন্য কেউ খেলে তা থেকেও রোগ ছড়াতে পারে। সেই ব্যক্তির মলমূত্র জলে মিশে গিয়ে সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠতে পারে। রক্তের মাধ্যমেও বাহিত হয় টাইফয়েডের জীবাণু।

Advertisement

কী কী লক্ষণ এই রোগের?

জ্বর কমতে চাইবে না। চিকিৎসক বলছেন, “জ্বর উত্তরোত্তর বাড়বে। প্রথম দিন জ্বর মাপার পরে তাপমাত্রা যা দেখলেন, পর দিন দেখবেন, তা আর একটু বেড়েছে। তার পর দিন আরও বাড়বে। এই ভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।”

জ্বরের পাশাপাশি ঘন ঘন পেটখারাপ, বমি হতে থাকবে। পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পাবেন রোগী।

পেশির ব্যথা খুব ভোগাবে। গায়ে, হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হবে। মাথা যন্ত্রণা হবে।

শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের টাইফয়েড হলে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে জন্ডিসের লক্ষণও দেখা দেয়। যদি দেখেন, টানা সাত দিনেও জ্বর কমছে না, পেটখারাপের ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছে না, সেই সঙ্গে জন্ডিসের লক্ষণ ফুটে উঠছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

টাইফয়েড হয়েছে কি না, তা এক সপ্তাহের আগে বোঝার উপায় নেই তেমন ভাবে। রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করে বোঝা যায়, টাইফয়েড হয়েছে কি না। ‘ওয়াইডাল টেস্ট’ নামে এক ধরনের পরীক্ষা চিকিৎসকেরা করেন। তবে তাতে ধরা পড়তে দেরি হয়। ক্ষেত্র বিশেষে ‘লিভার ফাংশন’ পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়া হয়। এই রোগের চিকিৎসা হল অ্যান্টিবায়োটিক। তবে রোগীরা নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে যাবেন না। পরীক্ষা করিয়ে টাইফয়েড ধরা পড়লে তবেই অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ় দেওয়া হয়। যদি রোগীর অবস্থা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তা হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে।

টাইফয়েডের রোগী কী খাবেন?

১) পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। ভাত হজম হয় সহজে। তাই হালকা মশলায় রান্না মাছ, চিকেন ও সব্জি দিয়ে ভাত খাওয়া ভাল।

২) তেলমশলা দেওয়া খাবার একেবারেই চলবে না। সব্জি সেদ্ধ করে খাওয়া ভাল। টাইফয়েড হলে এতটাই অরুচি হয়, যে খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। তাই অল্প অল্প করে বার বার খেতে হবে। প্রাতরাশে আলু সেদ্ধ নুন গোলমরিচ ও সামান্য মাখন দিয়ে খেতে পারেন।

৩) ডাল বেশি ঘন করে খাবেন না। ডালের পাতলা জল খাওয়া ভাল।

৪) টাইফয়েড থেকে সদ্য সেরে ওঠার পরেও শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে। তাই জলীয় খাবারের পরিমাণ বেশি হলেই ভাল।

৫) পর্যাপ্ত জল আছে, এমন ফল খেতে হবে। তরমুজ, মুসাম্বি, শসা, জামরুল-সহ মরসুমি ফল খান। টাটকা ফলের রস বাড়িতে বানিয়ে খান।

টাইফয়েড থেকে সেরে উঠতে সুষম ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে মাসখানেক। বাঁধাকপি, ফুলকপি জাতীয় সব্জি এই সময়ে না খাওয়াই ভাল। ফাইবার বেশি আছে, এমন খাবার কিছু দিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। কাঁচা স্যালাড একেবারেই খাবেন না। শুকনো লঙ্কা দিয়ে রান্না খাবার খাবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement