সর্ষের তেল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত।
বাঙালির হেঁশেল মানেই সর্ষের তেলের ঝাঁঝাঁলো গন্ধ। বঙ্গবাসী বলে শুধু নয়, গোটা ভারতেই রান্নার তেল হিসাবে সর্ষের তেলের ব্যবহার রয়েছে। সাদা তেল, নারকেল তেল বা অলিভ তেল দিয়ে রান্না হলেও সর্ষের তেলের চাহিদা ভারত-সহ এশিয়ার দেশগুলিতেই বেশি।
সাধারণ গৃহস্থ বাড়ির হেঁশেলে সর্ষের তেল থাকবেই। এই তেলের উপকারিতাও যেমন, তেমনই সর্ষের তেলে রান্নায় স্বাদও হয় খুব। কিন্তু, জানলে অবাক হবেন বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে রান্নায় সর্ষের তেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ। তার মধ্যে একটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ভোজ্য তেল হিসাবে সর্ষের তেল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কানাডা এবং ইউরোপের একাধিক দেশেও সর্ষের তেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। আমেরিকার মতো পুরোপুরি না হলেও অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে সর্ষের তেল ঠিক কতটুকু রান্নায় দেওয়া যাবে, তার মাপকাঠি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
এখন কথা হল, সর্ষের তেল নিয়ে ও সব দেশে এত চোখরাঙানি কেন? মার্কিন ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর মতে, সর্ষের তেলে ইরুসিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি। এটি একটি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর নয় বলেই দাবি মার্কিন খাদ্য দফতরের। তাদের মতে, এই অ্যাসিড বেশি মাত্রায় শরীরে ঢুকলে তা বিপাকক্রিয়ার উপরে প্রভাব ফেলবে। ফলে রান্নায় যদি একগাদা সর্ষের তেল ব্যবহার করা হয়, তা হলে সেই খাবার হজম হতেও যেমন দেরি হবে, তেমন পেটের গন্ডগোলও হবেই। মার্কিন খাদ্য দফতর আরও জানিয়েছে, এই যৌগ নাকি বেশি পরিমাণে শরীরে ঢুকলে মস্তিষ্কেরও ক্ষতি হতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমতে পারে ধীরে ধীরে। এই অ্যাসিড সব চেয়ে বেশি ক্ষতি করে হার্টের। হৃদ্পেশিতে চর্বি জমা হয়ে হৃদ্রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। সর্ষের তেলের বদলে তাই সয়াবিন তেল ও অলিভ তেলই ব্যবহার করেন আমেরিকার মানুষজন।
আমেরিকাবাসীরা সর্ষের তেলে যতই গলদ খুঁজে পাক না কেন, এই তেলের উপকারিতাও কিছু কম নয়। ভারতের চিকিৎসকেরা বলেন, সর্ষের বীজে থাকা তামা, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম এবং সেলেনিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সর্ষের তেল পরিমিত পরিমাণে রান্নায় ব্যবহার করলে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রিত হয়। সর্ষের তেলে থাকে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।