নিউরোএন্ডোস্কোপিক সার্জারি অস্ত্রোপচারকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। অপারেশনের টেবিলে শরীরে কোনও অংশ বড় করে কেটে তার সার্জারি এখন অতীত। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাধান্য পাচ্ছে এন্ডোস্কোপিক সার্জারি বা মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারি। সহজ করে বললে, এটি হল শরীরের অত্যন্ত ছোট একটি অংশ কেটে সেই অংশের সার্জারির পদ্ধতি। নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, এই ধরনের সার্জারি আদতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অস্ত্রোপচারের পরিভাষাই বদলে দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূলত নিউরোসার্জারি ক্ষেত্রে এই সার্জারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কারণ এই ধরনের অস্ত্রোপচারে শরীরের বড় অংশ কাটার প্রয়োজন হয় না। অথচ এটি চিকিৎসকদের আরও ভাল ভাবে টিউমার চিকিৎসা করতে সাহায্য করে। এবং রোগীও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের কনসালটেন্ট, নিউরোসার্জেন আদিত্য মন্ত্রীর মতে, অতীতে বড় বড় সার্জারিগুলি বর্তমানে খুব সহজেই শরীরের ছোট একটি অংশ কেটে করা সম্ভব হচ্ছে। কখনও কখনও সেই অংশটুকুও কাটার প্রয়োজন পড়ছে না। তিনি জানান,“এন্ডোস্কোপিক সার্জারিগুলি মানুষের শরীরের প্রাকৃতিক ছিদ্র — যেমন নাক, ইত্যাদির মাধ্যমে করা সম্ভব হয়। আবার কোনও ক্ষেত্রে স্ক্যাল্পে ছোট্ট একটি অংশ কাটাই যথেষ্ট... উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সাধারণত পিটিউটারি গ্ল্যান্ড বা মাথার স্ক্যাল্পে কোনও অস্ত্রোপচারে করতেই এন্ডোস্কোপি সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়।”
এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত সুবিধাজনকও বটে। কারণ এর ফলে চিকিৎসকেরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে টিউমারটিকে পরীক্ষা করতে পারেন। সর্বোপরি একটি প্যানোরমিক ভিউ পাওয়া যায়। যা অতীতে কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না। এটি চিকিৎসকদের নিরাপদে অস্ত্রোপচার করতে সাহায্য করে যা আখেরে সম্পূর্ণ টিউমারটিকে অপসারণের সম্ভাবনা বাড়ায়। সেই সঙ্গে এই ধরনের সার্জারি অপারেশন পরবর্তী রেডিয়েশন থেরাপির মাত্রাও হ্রাস করে।
নিউরো এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসকেরা সফলভাবে এন্ডোস্কোপ ব্যবহারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের গভীরে বাসা বেঁধে থাকা টিউমারকে সহজেই খুঁজে বের করতে পারেন। এন্ডোস্কোপেরই একটি অংশ নিউরো নেভিগেশনের মাধ্যমে সার্জেনরা মস্তিষ্কের সব থেকে ভিতরের অংশে পৌঁছতে পারেন এবং সেই টিউমারটিকে ভাল ভাবে পরীক্ষা করতে পারেন। আদিত্য মন্ত্রীর মতে, “এই নিউরো নেভিগেশন পদ্ধতির ফলে বর্তমানে মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ সহজেই পৌঁছানো যায়।”
যেহেতু নিউরো-এন্ডোস্কোপি টিউমার অপসারণের সময়ে এই ধরনের নির্ভুলতা প্রদান করে, সেহেতু রোগীর অস্ত্রোপচার পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অত্যন্ত কম হয়। এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ভারতের প্রায় সবকটি বড় শহরেই অত্যন্ত দ্রুত এই ধরনের অত্যাধুনিক বৈপ্লবিক প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। অত্যাধুনিক চিকিৎসার এই পরিকাঠামো উপভোগ করতে বর্তমানে পূর্ব ভারতের রোগীদের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসার জন্য অন্যতম সেরা গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে কলকাতা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই বিপুল জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এই জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে এখনও অবগত নন। বেশ কয়েকটি বিষয়ে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। যেমন এখনও বেশ কিছু মানুষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে এন্ডোস্কোপির মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক। বিশেষ করে নিউরোসার্জারিতে। যা একটি অন্যতম বড় সমস্যাও বটে।
কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল, নিউরোসার্জারিতে এন্ডোস্কোপ ব্যবহারের পদ্ধতির সামগ্রিক রূপরেখাকে বদলে দিয়েছে। আদিত্য মন্ত্রীর মতে, এন্ডোস্কোপের অন্যান্য অনেক প্রয়োগপদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে সাধারণ একটি পদ্ধতি হল এন্ডোস্কোপিক থার্ড ভেন্ট্রিকুলোস্টমি (ইটিভি)। তিনি জানিয়েছেন, “অবস্ট্রাকটিভ হাইড্রোসেফালাসের চিকিৎসায় ইটিভি ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও, এটি মস্তিষ্কের অন্যান্য সিস্টিক ক্ষতের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়। যেখানে চিকিৎসকেরা মস্তিষ্কের সিস্টে একটি কুঠুরি তৈরি করেন এবং এন্ডোস্কোপের মাধ্যমে মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা প্রাকৃতিক সিএসএফ গহ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন”।
নিউরোসার্জারিতে এন্ডোস্কোপ ব্যবহারের এই সমস্ত সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি উন্নত পরিকাঠামো এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি করা অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষা বদলে দিয়েছে। যে কারণে বর্তমানের ভারত সহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য অ্যাপোলোকেই প্রধান গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।