এই মুহূর্তে হাওয়ড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন ২৪ বছর বয়সি অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত।
১৭ দিন ধরে হাসপাতালের আইসিইউ বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন ‘ফাইটার’ ঐন্দ্রিলা শর্মা। তাঁর আরোগ্য কামনা করছে গোটা টলিউড। সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের প্রার্থনার ঢল। সকলের একটাই কামনা ‘মারণ রোগকে জয় করে ফিরে এসো ঐন্দ্রিলা’!
এরই মাঝে অভিনেতা অনিন্দ্যপুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি পোস্ট উস্কে দিল হাজার প্রশ্ন। মঙ্গলবার রাতে অনিন্দ্যপুলক ফেসবুকে লেখেন, “আমাদের এক জন অভিনেত্রীকে সুস্থ করে ফেরত আনার জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনার চেয়ে অর্থের সাহায্য জরুরি কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার।’’
এই মুহূর্তে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন ২৪ বছর বয়সি অভিনেত্রী। চলছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক ট্র্যাকিওস্টোমি কেয়ার’। এয়ার ম্যাটট্রেস সহ আইসিইউ-র সব পরিষেবাই ব্যবহার করা হচ্ছে অভিনেত্রীর চিকিৎসায়।
আইসিইউ-তে যা যা পরিষেবা-সহ ঐন্দ্রিলার চিকিৎসা করা হচ্ছে, যে কোনও প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালের খরচ দেখলে বোঝা যায়, প্রতি দিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ হতে পারে রোগীর। এ ছাড়াও রোগীর অবস্থা কতটা সঙ্কটজনক, তাঁকে কী ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তাঁকে কী কী সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হচ্ছে— তার উপরে নির্ভর করে খরচ আরও বাড়ে। অঙ্কটা নেহাত কম নয়।
কোনও রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হলে অনেকেই বুঝতে পারেন না, কেন এত বেশি বিল হয়। সেই নিয়ে ক্ষোভও কম থাকে না রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে। কী এমন বিশেষ পরিষেবা দেওয়া হয় আইসিইউ-তে?
চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু বললেন, ‘‘ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রোগীর তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতি কেমন, তা জানার জন্য প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, সেন্ট্রাল লাইন থাকে, গ্যাজেটর থাকে, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ চলে, রোগীকে সাপোর্ট সিস্টেমে দেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। কোনও রোগী, যাঁর স্ট্রোক হয়েছে, আগে দু’বার ক্যানসারের হয়েছে এবং এখন তাঁকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে তাঁর প্রতি দিনের খরচ প্রায় ৫০ হাজারের উপরেই হবে। এর বেশিও হতে পারে।’’
আইসিইউ-তে রোগীর দেখাশোনা করার জন্য একটি বড় দলকে সর্ব ক্ষণ নিয়োগ করা হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। ছবি: সংগৃহীত।
যে কোনও রোগের সঙ্গে লড়াই করতে প্রোটিন আমাদের শরীরে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনটেন্সিভ কেয়ারে যে রোগীদের রাখা হয়, তাঁদের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন মূলত বেরোতে থাকে শরীরে যতটা প্রোটিন স্টোর করা থাকে, তা থেকে। তাই এই রোগীদের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তাই হাই প্রোটিন ডায়েট দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হয় অন্য জায়গায়। আইসিইউ-তে থাকা বেশির ভাগ রোগীর শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কম থাকে। তাঁরা নানা ক্ষেত্রে ইমিউনো-কম্প্রোমাইজড হন। তাই সাধারণ রান্নাঘরে তৈরি খাবার খেলে শরীরে নানা রকম সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফর্মুলা ফুডের উপর থাকতে হয়। তাতে খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। আইসিইউ-র রোগীদের হাসপাতালে বিল অনেকটা বেশি হওয়ার অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর একটি বড় অংশ হল রোগীর ডায়েটের খরচ।
এ ছাড়া আইসিইউ-তে রোগীর দেখাশোনা করার জন্য একটি বড় দলকে সর্ব ক্ষণ নিয়োগ করা হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। যে কোনও ক্রিটিক্যাল কেয়ারই মূলত দু’টি স্তম্ভের উপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকে। তা হল সময় এবং প্রশিক্ষণ। অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকা রোগীদের যত্নের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকতা বা গতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্কটকালীন অবস্থায় থাকা রোগীর পরীক্ষা থেকে শুরু করে রোগ নির্ণয় বা সাপোর্ট দেওয়া ইত্যাদি কোনও ক্ষেত্রে যদি বিলম্ব হয়, তা হলে সেই রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আবার অন্য দিকে, যে সব চিকিৎসক, নার্স, সহকারী কর্মী এবং টেকনিশিয়ানরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। হাসপাতালের অন্য বিভাগের তুলনায় আইসিইউ-তে দক্ষ লোকবলও বেশি লাগে। সেই জন্যেও খরচ বাড়ে।
ক্রিটিক্যাল কেয়ারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘অর্গান সাপোর্ট’। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইসিইউ-তে থাকা রোগীদের এক বা একের বেশি অঙ্গ, যেমন হৃদ্যন্ত্র, কিডনি, ফুসফুস, লিভার বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে ব্যাহত হয়। চিকিৎসা চলাকালীন, শরীর তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরে পেতে বেশ কয়েক দিন সময় নিতে পারে। এই সময়ে, যে অঙ্গটি কাজ করছে না, সেটিকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ভেন্টিলেটরের। এই কারণেও খরচটা অনেকখানি বেড়ে যায়।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যেন আইসিইউ-এর বিল অত্যাধিক হারে না বাড়ায় সেই জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে। প্রয়োজনে সরকারি তরফে বিশেষ ছাড়েরও ব্যহস্থা রয়েছে।