বসে থাকার সময়েও বুক ধড়ফড় করছে, তা হলে সাবধান। ছবি: ফ্রিপিক।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দনের হার স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ৭২ বার। তবে ব্যক্তিভেদে সামান্য কমবেশি হতে পারে। বিশ্রামের সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই হৃৎস্পন্দনের হার কম থাকে। কারণ শরীর নড়াচড়া কম হয়। কিন্তু ওই সময়েও যদি হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায় তাহলে মুশকিল। ধরুন, অনেক ক্ষণ ধরে বসে অথবা শুয়ে রয়েছেন, কিন্তু তার পরেও অনুভব করছেন, আপনার বুক একটু বেশিই ধড়ফড় করছে। তা হলে কিন্তু সতর্ক হতে হবে।
হার্টের চিকিৎসকেদের মতে, বিশ্রাম নেওয়ার সময় একজন সুস্থ, পূর্ণবয়স্ক মানুষের হৃৎস্পন্দনের হার হওয়া উচিত প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ৮০ বার। কিন্তু সেটা ১০০ ছাড়িয়ে গেলে বুঝতে হবে, শরীরে কোনও সমস্যা হচ্ছে। হৃৎস্পন্দনের হার খুব কমে যাওয়া অথবা খুব বেড়ে যাওয়া বড় অসুখের লক্ষণ হতেই পারে। অনিয়মিত বা অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দন হৃদ্রোগের কারণও হয়ে উঠতে পারে।
আমাদের হৃদ্যন্ত্র মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এই পাম্প করার ক্ষমতাকে চালনা করার জন্য হার্টের নিজস্ব পেসমেকার থাকে, যাকে বলে সাইনাস নোড (এসএ নোড)। এই সাইনাস নোডের কাজ হল হৃৎস্পন্দন তৈরি করা। ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছে হার্টের এই নিজস্ব পেসমেকার। বৈদ্যুতিক স্পন্দন তৈরি করছে। কিন্তু কোনও ভাবে যদি এই সাইনাস নোড ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনই হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। কখনও বেড়ে যায়, আবার কখনও কমে যায়।
হৃৎস্পন্দনের হার কমে যাওয়া ও বেড়ে যাওয়া যথাক্রমে ‘ব্রাডিকার্ডিয়া’ ও ‘ট্যাকিকার্ডিয়া’-র লক্ষণ হতে পারে। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’ বলা হয়। অ্যারিদমিয়া হার্টের উপরের প্রকোষ্ঠ অ্যাট্রিয়া বা নীচের প্রকোষ্ঠ ভেনট্রিকলগুলিতে দেখা দিতে পারে। অনেক সময়েই এই রোগের কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে বুক ধড়ফড়, মাথা ঝিমঝিম করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। এমনও দেখা গিয়েছে, শরীরে ঘন ঘন সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রার হেরফেরের জন্য হৃৎস্পন্দের হার আচমকা বেড়ে প্রতি মিনিটে ১৫০ বা ২০০-তে পৌঁছে গিয়েছে। এমন হলে কিন্তু বিপদ ঘনাতে দেরি হবে না।
মানসিক চাপ, অতিরিক্ত উদ্বেগ, হরমোনের ওঠানামা, মাত্রাতিরিক্ত নেশা— এ সব কারণেও অনিয়মিত ও দ্রুত হৃৎস্পন্দন হতে পারে। অন্য কোনও রোগের কারণেও এই সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। যেমন রক্তচাপজনিত সমস্যা, ডায়াবিটিস বা অতীতে হার্ট অ্যাটাক হলে বা হার্টে অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দুর্বল হার্ট এবং তার সঙ্গে দ্রুত ও অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হলে প্রথমে রোজের খাওয়াদাওয়া ও জীবনযাপন পদ্ধতির উপরে জোর দেওয়া হয়। যাঁদের হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত, তাঁদের অতিরিক্ত চিনি ও নুন খেতে বারণ করা হয়। বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার, রেড মিট, অ্যালকোহল, ক্যাফিন কম খেতে বলা হয়। তার পরেও সুরাহা না হলে এবং সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে একটি বিশেষ ডিভাইস ‘অটোমেটিক ইমপ্লান্টেবল কার্ডিয়োভার্টার-ডিফিব্রিলেটর’ (এআইসিডি) বসানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।