কেমন হতে হবে মায়েদের ডায়েট। ছবি: ফ্রিপিক।
মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই। নবজাতকের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য যাবতীয় প্রয়োজন মায়ের দুধ থেকে পাওয়া যায়। শিশুর জন্মের পরে, প্রথম যে হলুদ বর্ণের গাঢ় দুধ নিঃসৃত হয়, তাকে ‘কলোস্ট্রাম’ বলা হয়। ‘কলোস্ট্রাম’ নবজাতকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এতে পুষ্টিগুণ ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে, যা নবজাতককে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত রাখে।
মা যদি সুস্থ থাকেন ও অপুষ্টিতে না ভোগেন, তা হলে সন্তান জন্মের পরে, প্রায় এক বছর পর্যন্ত ৪০০-৬০০ মিলিলিটার মাতৃদুগ্ধ তৈরি হতে পারে। শিশুদের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য প্রায় ১০০ কিলোক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়। আর প্রতি ১০০ মিলিলিটার মাতৃদুগ্ধে ৭০ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। সন্তানের পুষ্টির জন্য মাতৃদুগ্ধের উৎপাদন কমে গেলে চলবে না। তাই স্তন্যপান করাচ্ছেন যে মায়েরা, তাঁদের এমন খাবার খেতে হবে, যাতে মাতৃদুগ্ধের উৎপাদন বাড়ে। সন্তানও তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়।
স্তন্যদাত্রী মায়েরা কী কী খাবেন
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর পরামর্শ, সবুজ শাকসব্জি বেশি করে খেতে হবে। পালং শাক, ব্রকোলি এই সময়ে খুব উপকারী। যে কোনও খাবারই খেতে হবে মশলা ছাড়া। তেল যত কম খাওয়া যায় ততই ভাল। শম্পা বলছেন, স্তন্যদাত্রী মায়েরা প্রাতরাশে ওট্স খেতে পারেন। সঙ্গে ড্রাই ফ্রুটস। সব্জি দিয়ে হালকা স্যুপও খাওয়া যেতে পারে।
মাকে নিয়ম করে জল খেতে হবে। দিনে অন্তত সাড়ে তিন থেকে চার লিটার জল খাওয়া জরুরি। যদি কোনও সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। রয়েছে। যে সকল মায়ের শারীরিক কোনও অসুবিধা নেই, তাঁরা দিনে এক চামচ করে ঘি খেতে পারেন। তাতে কাজ হয়। এরই পাশাপাশি খেতে হবে ক্যালশিয়ামযুক্ত খাবার। দুধ, পনির খেতে পারেন মায়েরা। সাবু খাওয়াও এই সময়ে খুব উপকারী। দুধ-সাবু খেতে পারেন।
দিনে দু’-তিন বার মায়েদের ডায়েটে প্রোটিনে সমৃদ্ধ খাবার রাখতেই হবে। প্রোটিনের বড় উৎস হল মাছ। সারা দিনে দু’টুকরো মাছ খেতেই হবে। রুই, কাতলা, পমফ্রেট এবং চুনো মাছও খেতে পারেন নতুন মায়েরা। মৌরলা মাছে প্রচুর আয়রন থাকে। দেশি ট্যাংরাও খুব উপকারী। তবে খেয়াল রাখবেন, বেশি তেল, ঝাল, মশলা দিয়ে যেন মাছ রান্না না হয়। মাছের পাতলা ঝোলই খেতে হবে। মাংসের মধ্যে চিকেনই খান। ডিম রোজ খেলে ভাল। রেড মিট কয়েক মাস এড়িয়ে চলুন।
ডাল, নানা রকম বীজ ও বাদাম খাওয়া ভাল। চিয়া বীজ, তিসি ও কুমড়োর বীজ খেতে পারেন। মুগ ডাল খেতে পারেন মায়েরা। বেশি করে ফল খেতে হবে এই সময়ে। তবে প্রচুর চিনি দেওয়া ফলের রস বা প্যাকেটবন্দি ফলের রস খাবেন না।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। সন্তানকে স্তন্যপান করাচ্ছেন যে মায়েরা, তাঁদের কী কী খাওয়া উচিত তা চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।