ছবি : সংগৃহীত।
বলিউডে ইদানীং যাঁরা ওজন কমানো নিয়ে কথা বলছেন, দেখা যাচ্ছে তাঁদের অনেকেই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ে ভরসা করেছেন। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ অবশ্যই অভিনেতা রাম কপূর। তিনি১৬:৮ নিয়মে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে প্রায় ৫০ কেজি ওজন ঝরিয়েছেন। মেদবহুল চেহারার বলিউডের অভিনেতার এখন নির্মেদ চেহারা। হাতে প্রকট হয়েছে পেশির নকশা। স্থূলত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন যাঁরা, তাঁরা রামের পরিবর্তন দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। অনুপ্রাণিতও হয়েছেন। ফলে নতুন করে ঝোঁক বেড়েছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের দিকে।
সোজা সাপটা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, যা কি না দিনের একটা দীর্ঘ সময় নিয়ম মেনে উপবাসে থাকার পদ্ধতি, তাতে ২৪ ঘণ্টাকে দু’ ভাগে ভেঙে নেওয়া হয়। বেশি সময় রাখা হয় উপবাসের জন্য। কম সময় থাকে খাওয়ার জন্য। মূলত ১৪:১০ বা ১৬:৮ অনুপাতেই ভাঙা হয় না-খাওয়া এবং খাওয়ার সময়কে। তবে যাঁরা প্রথম শুরু করছেন, তাঁদের অনেকেই ১২:১২ অনুপাতে খাওয়া এবং উপোসের সময় বেঁধে নেন। ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করেন উপোসের সময়। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং মেনে চলছেন, তাঁদের কেউ কেউ না খাওয়ার সময়কে টেনে ১৮ ঘণ্টাতেও নিয়ে যান। সে ক্ষেত্রে খাওয়ার জন্য সারা দিনে হাতে থাকে মাত্র ৬ ঘণ্টা। এখন প্রশ্ন হল, খাওয়ার জন্য নির্ধারিত ওই ঘণ্টা কয়েক সময়ে কী খাবেন?
ছবি: সংগৃহীত।
যা খুশি খাওয়া যায় কি?
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং যাঁরা করেন, তাঁরা অনেকেই ভাবেন, যে হেতু দিনের দীর্ঘ সময় তাঁরা উপবাস করছেন, তাই বাকি সময়টুকু খাবার নিয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিষয়টি আদপেই তেমন নয়। বরং পুষ্টিবিদেরা বলছেন, যে হেতু দীর্ঘ সময়ে খালিপেটে থাকছেন, তাই খাওয়ার সময় রুটিন মেনে কিছু খাবার খেতে হবে। কিছু খাবার বাদ দিতে হবে। ইনস্টাগ্রাম প্রভাবী এবং পেশায় ফিটনেস প্রশিক্ষক সুনীল শেট্টি জানিয়েছেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কিছু নিয়ম মেনে চললে ১৫ দিনে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন ঝরানো সম্ভব। কী নিয়মে খাওয়াদাওয়া করা উচিত, তার পরামর্শও দিয়েছেন সুনীল।
ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে খাওয়াদাওয়া করবেন?
১। জলপান: ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের একটা সুবিধা হল, উপবাসের সময় জল এবং চিনি ছাড়া পানীয় খাওয়ায় কোনও বাধা নেই। সুনীল জানাচ্ছেন, যাঁরা ওই পদ্ধতিতে ওজন ঝরানোর কথা ভাবছেন, তাঁরা প্রথমেই ঠিক করে নিন দিনে প্রচুর জল খাবেন। অন্তত ৩ লিটার। কারণ শরীরকে ভিতর থেকে আর্দ্র রাখা সবচেয়ে জরুরি।
২। অনুপাত: ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের সবচেয়ে কার্যকরী অনুপাত হল ১৬ ঘণ্টা না খাওয়া এবং ৮ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া। যদি ১৬:৮ অনুপাতে উপবাস করার পরিকল্পনা থেকে থাকে, তবে আগে ঠিক করে নিন, দিনের কোন সময় থেকে উপবাস শুরু করবেন আর কোন সময় থেকে খাওয়া শুরু করবেন।
ছবি: সংগৃহীত।
৩। উপবাসের সময়: সুনীল বলছেন, অনেকেই রাত ৮টা থেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করেন। খাবার খান আবার পরের দিন দুপুর ১২টার সময়। তাতে শুধু প্রাতরাশ না খেলেই চলে। দুপুরের খাবার, বিকেলের জলখাবার এবং নৈশাহার ধীরে সুস্থে করা যায়। কেউ কেউ আবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে নেন। সে ক্ষেত্রে প্রাতরাশ করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। তবে নৈশাহার সেরে ফেলতে হয় বিকেল ৫টার মধ্যে।
কী কী খেতে পারেন?
গরম জল: সকালে এক কাপ গরম জল খেয়ে দিন শুরু করুন। তাতে সামান্য দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন।
ছবি: সংগৃহীত।
কফি: সুনীল বলছেন, গরম জল খাওযার আধ ঘণ্টা পরে চিনি ছাড়া এক কাপ কফি খান। তাতে এক চা চামচ ঘি মিশিয়ে নিতে পারেন। যদিও পুষ্টিবিদদের একাংশ বলেন, খালি পেটে কফি খেলে তা অনেক সময় হজমের সমস্যা তৈরি করে এমনকি, কর্টিসলের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই কফি খেলে তা সামান্য খাবারের সঙ্গেই খাওয়া ভাল। সে ক্ষেত্রে যদি প্রাতরাশ না করার পরিকল্পনা থাকে, তবে খালি পেটে কফি না খাওয়াই ভাল।
খাবার: ফাইবারের জন্য রুটি বা ওটস বা কিনোয়া বা ডালিয়া বা মিলেটস খাওয়া যেতে পারে। শাক-সব্জি, ফল খেতে পারেন। প্রোটিনের মধ্যে ডাল, বাদাম, বীজ শস্য, ডিম, মাছ, চর্বিমুক্ত মাংসও রাখতে পারেন খাবারের তালিকায়।
জলখাবার: মাখনা, সামান্য পরিমাণে বাদাম, ফল, পপকর্ন খেতে পারেন।