তাপপ্রবাহেও জারি আছে রিল তৈরির শখ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
এই গরমে শরীর ঘিরে নানা সমস্যা। অন্য দিকে পেশার চাপ। আর তেমন পেশা যদি হয় ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটারের’ বা ‘রিল তৈরির’? সমস্যার তাপ সেখানে অভাবিত। কিন্তু কী বলছেন তাঁরা? জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে তাঁরা কি সচেতন?
‘‘যতই গরম পড়ুক, যতই তাপপ্রবাহের সতর্কতা থাকুক, রিল শুট করা তো বন্ধ রাখলে চলবে না। কারণ এটাই আমার পেশা,’’ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পেশায় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর প্রেরণা দাস। ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো তৈরি করে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। দর্শক তাঁর ভিডিয়ো দেখতে পছন্দ করেন। অনুরাগীর সংখ্যাও লক্ষাধিক। দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে চেষ্টা করেন অল্প সময়ের ব্যবধানে ভিডিয়ো পোস্ট করার। কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই প্রবল রোদে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে ভিডিয়ো শুট করতে। না হলে রোজগারে যে টান পড়ে!
গত পরশুর ঘটনা। তীব্র রোদে ইনস্টাগ্রাম রিল বানাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে সোনারপুরের বাসিন্দা বছর ষোলোর আলপনা গোমসের। এই ঘটনায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বাবার কাছ থেকে এই ঘটনাটির কথা জেনেছেন প্রেরণা। এর পরেও ঝুঁকি নিয়ে রোদের মধ্যেও ভিডিয়ো বানাবেন তিনি?
প্রেরণার কথায়, ‘‘এটাই আমাদের কাজ। করতে তো হবেই। শুধু আমি বলে নয়, অনেকেই রোদের মধ্যে কাজ করছেন। শুটিংয়ের জন্য দিনের আলো দরকার হয়। ফলে বেরোতেই হচ্ছে। তবে সব রকম সাবধানতা মেনেই শুট করছি। সানস্ক্রিন মাখছি। বেশি করে জল খাচ্ছি। একটা জলের বোতল সঙ্গে থাকছে কাজের সময়। তবে আমি বলব যে, দুপুর ১২ থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে যতটা সম্ভব কম বেরোনো যায়, ততই ভাল। একান্ত দরকার না পড়লে বাড়িতে থাকাই শ্রেয়। সব কিছুর উপরে জীবন। সেটা তো ভুলে গেলে চলবে না!’’
কলকাতার তাপমাত্রা ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এক পা হাঁটলেই দরদর করে ঘাম হচ্ছে। সেই সঙ্গে তীব্র রোদের তাপ। ঝলসে যাচ্ছে চোখমুখ। অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কিন্তু পেশাগত ব্যস্ততা তো থেমে থাকার নয়। বাইরে বেরোতে হচ্ছে।
রীতিমতো প্রাণ হাতে করে অফিসে পৌঁছচ্ছেন প্রায় সকলেই। তার পর অবশ্য কয়েক ঘণ্টার জন্য স্বস্তি। কিন্তু সরাসরি রোদের মধ্যেই অনেককেই কাজ করতে হচ্ছে। ভ্লগ কিংবা রিল ভিডিয়ো তৈরি সেই তালিকায় রয়েছে। উপায়?
ফিট থাকতে খাওয়াদাওয়ায় বদল আনার কথা বলছেন সচেতন মানুষজন। পুষ্টিবিদ এবং যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিকের উত্তর, ‘‘সুস্থ থাকতে নিজেকে ‘হাইড্রেটেড’ রাখা ছাড়া কোনও গতি নেই। তবে তার জন্য যে সব সময় পরিচিত ‘ওআরএস’ জাতীয় কিছু খেতে হবে, তারও কোনও মানে নেই। ঘোল, ছাতুর শরবত কিংবা এ ধরনের পানীয় খাওয়া যেতে পারে। বাইরে বেরিয়ে যাঁদের কাজ করতে হচ্ছে, এমন কিছু পানীয় যদি তাঁরা সঙ্গে রাখেন, তা হলে জলের ঘাটতিও পূরণ হবে, আবার শরীরও থাকবে চাঙ্গা।’’
অনন্যা এর সঙ্গে আরও বললেন, ‘‘বাইরে বেরোনোর আগে একসঙ্গে বেশি খাবার না খাওয়াই ভাল। অল্প অল্প করে খাবার বারে বারে খেতে হবে। যাতে হজমের কোনও সমস্যা না হয়। সেই সঙ্গে সানস্ক্রিন মাখা আর সুতির পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। চড়া রোদে ভিডিয়ো শুটের ক্ষেত্রে, একটু বেশি করে যদি মেকআপ করে নেওয়া যায়, তা হলে অতিবেগনি রশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’’
শমীক অধিকারী। সমাজমাধ্যমে অবশ্য তিনি পরিচিত ‘ননসেন’ হিসাবে। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক মিলিয়ে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা কয়েক লক্ষ। বিভিন্ন স্বাদের ভিডিয়ো বানান তিনি। দর্শককে বিনোদন দেওয়াই তাঁর কাজ। তবে গরমের বিষয়টি নিয়ে তিনিও চিন্তিত।
তাঁর কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে বহু জন কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দূর দূর থেকে আসেন। আমার দলের সদস্যদের মধ্যে কেউ যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন, সেটা এখন বিশেষ করে দেখতে হচ্ছে। চেষ্টা করছি সকালের দিকে শুট করে নেওয়ার, কিংবা সন্ধ্যার পর কাজ রাখতে। তা ছাড়া আমি যে ধরনের ভিডিয়ো তৈরি করি, তার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপনের শুট থাকছে। সেটা করতে বাইরে যেতে হচ্ছে।’’
আউটডোর শুটের ক্ষেত্রে অবশ্য বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন তিনি। সঙ্গে জলের বোতল রাখছেন। সানস্ক্রিন মাখছেন। ঘাম আটকাতে ব্যবহার করছেন ‘আইস জেল’।
উত্তাপের পারদ ক্রমশ চড়ছে। বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। চিকিৎসকেরা বার বার করেই দিনের বেলা বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু শমীক, প্রেরণার মতো আরও অনেককেই তাঁদের পেশার তাগিদে বেরোতে হচ্ছেন। কতটা সাবধানতা অবলম্বন করলে প্রবল দাবদাহে কাজ করেও সুস্থ থাকা যায়?
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর পরামর্শ, ‘‘দুপুর ১২টা থেকে ৪টের মধ্যে বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে। তবে কাজের প্রয়োজনে অনেককেই বেরোতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বেশি করে জল খেতে হবে। ছাতা, টুপি, রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে। সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরে বেরোতে হবে। তবে সকালের দিকে কিংবা সূর্য ডোবার পর এই কাজগুলি করলে ভাল হয়। অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম যাতে না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’’